চিতল / Clown knifefish
চিতল একটি চ্যাপ্টা দেহের মাছ।
বৃহদাকার দেহের তুলনায় মাথা ছোট । বাংলাদেশের
খালে বিলে নদীতে এটি সহজলভ্য।
অত্যন্ত আকর্ষনীয় চিতল মাছের বৈজ্ঞানিক নাম Notopterus
chitala এবং ইংরেজী নাম Clown knifefish। চ্যাপ্টা ও লম্বাটে
দেহবিশিষ্ট এ মাছটির দেহ পৃষ্ঠ তামাটে বাদামী ও পৃষ্ঠের দিকে প্রতি পার্শ্বে ১৫টি
রূপালী ডোরা থাকে। এ মাছের মাথার পেছনে পৃষ্ঠদেশ ধনুকের মত বাঁকা হয়ে উপরে উঠে
গেছে। লেজের নিচের দিকে অনিয়মিতভাবে ৫-৮টি কালো ফোঁটা থাকে। দৈর্ঘ্যে এ মাছ প্রায়
১২০ সে.মি. পর্যন্ত হয়ে থাকে।
চিতল নদী-নালা, খাল-বিল, হাওড়-বাওড়, পুকুরসহ
বিভিন্ন ধরনের স্বাদুপানির জলাশয়ে বাস করে। এরা পরিষ্কার পানিতে বসবাস করতে পছন্দ
করে। এ মাছ মাংসাশী এবং শিকারের মাধ্যমে খাদ্য গ্রহণ করে থাকে। এদের খাদ্য তালিকায়
পোকামাকড় ও তাদের শূককীট, ক্রাস্টেসিয়া জাতীয়
প্রাণী, শামুক, ছোট মাছ
ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত। কখনও কখনও বর্ষাকালে প্লাবিত ধানতে বা পাটক্ষেতে পোকামাকড়
খাবার উদ্দেশ্যে এদের বিচরণ করতে দেখো যায়।
চিতল বর্ষাকালে প্রজনন করে থাকে। প্রজনন কালে এ মাছ জলাশয়ের তলদেশে
মাটি খুঁড়ে
বাসা তৈরী করে এবং কাঠ বা এজাতীয় বস্তুর গায়ে ডিম দিয়ে থাকে। এদের ডিম
বেশ আঠালো এবং বড় আকারের। শুধু পুরুষ মাছেরা ডিম পাহাড়া দেয় এবং লেজের সাহায্যে
পানি আন্দোলনের মাধ্যমে ডিমে অক্সিজেন সরবরাহ ও কাদামুক্ত রাখে। চিতল মাছ খেতে
সুস্বাদু এবং এর উচ্চ বাজার মূল্য ও চাহিদা রয়েছে। একুয়ারিয়ামে বাহারি মাছ হিসেবেও
চিতল মাছ পালন করা যেতে পারে।
বাসস্থান কমে যাওয়া, ক্ষুদ্র ফাঁসের জাল
ব্যবহার করে অতিরিক্ত আহরণ, ডিমওয়ালা মাছ ধরা
ইত্যাদি কারণে অন্যান্য দেশী মাছের মত চিতল মাছেরও সংখ্যা পূর্বের তুলনায় অনেক কমে
গেছে। বর্তমানে চলন বিল এলাকায় কোথাও এদের প্রাচুর্যতা লক্ষ্য করা যায় না। সরকার ও
সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্থার উচিত অন্যান্য দেশী মাছের সাথে সাথে এদেরও সংরক্ষণের
ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এ উদ্দেশ্যে জেলে জনগোষ্ঠীর মধ্যে সচেতনতামূলক প্রচার, অভয়াশ্রম সৃষ্টি, প্রজনন
মৌসুমে মাছ ধরা হতে বিরত থাকা ইত্যাদি পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে।
প্রতি ৯০ গ্রামে
ক্যালরি 90
মোট চর্বি 2 গ্রাম 3%
সোডিয়াম 34 মিলিগ্রাম 1%
প্রোটিন 18 গ্রাম 36%
ক্যালসিয়াম, Ca 110 মিগ্রা 11%
আয়রন, ফী ২ এমজি 1২%
পটাসিয়াম, কে 120 মিলিগ্রাম 3%
চিতল মাছের পেটির
কারি
উপকরণ:
চিতল মাছ ১টি বড় (বড় তেল বেশি থাকে। ওজন প্রায় তিন কেজি)। হলুদগুঁড়া ৩
চা-চামচ, মরিচগুঁড়া ৫ চা-চামচ, ধনেগুঁড়া ৪ চা-চামচ। পেঁয়াজকুচি আড়াইশ গ্রাম। লবণ
ও চিনি পরিমাণ মতো। গরম মসলাগুঁড়া ১ চা চামচ বা পরিমাণ মতো। পানি পরিমাণ মতো।
পদ্ধতি: চিতল মাছ কেটে ১০ টুকরা পেটি তেলে ভেজে একটি
পাত্রে রাখুন।
এবার কড়াইতে তেল গরম করে কুচানো পেঁয়াজ কড়াইতে বাদামি করে ভেজে সব
মসলা ঢেলে দিন। তারপর একটু একটু পানি দিয়ে মসলা কষিয়ে নিন।
কষানো হল কিনা বোঝার জন্য খুন্তিতে মসলা নিয়ে ঘ্রাণ নিন। ঘ্রাণ থাকলে
মনে করবেন ভালো মতো মসলা কষানো হয়নি।
মসলা কষানো হলে চিতল মাছের ভাজা পেটিগুলো কড়াইতে ছেড়ে দিন।
এবার কড়াইটি ঢাকনা দিয়ে ভালো মতো ঢেকে ২০ মিনিট রান্না করুন। তারপর
কড়াইটি চুলা থেকে নামিয়ে নিন।
তৈরি হয়ে গেল চিতল মাছের পেটির কারি। এবার গরম মসলাগুঁড়া অথবা পানিতে
গুলে রান্না করা পেটির কারির ওপর ছড়িয়ে দিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন।
চিতল মাছের কোপ্তা
উপকরণ:
১ কেজি পরিমাণের চিতল মাছের গাদা, হলুদগুঁড়া পরিমাণ মতো, মরিচ গুঁড়া পরিমান
মতো, ধনেগুঁড়া
৩ চা-চামচ। পেঁয়াজ কুচানো আড়াইশ গ্রাম। লবণ পরিমাণ মতো, গরম মসলাগুঁড়া পরিমাণ মতো।
পদ্ধতি: চিতল মাছের গাদা থেকে চামচ দিয়ে কেচে কেচে মাছের
অংশ বের করে নিন।
এবার শিলপাটায় বেটে লবণ ও হলুদগুঁড়া মাখিয়ে ১৫ মিনিট রেখে দিন।
তারপর ইচ্ছামতো লম্বা বা গোলাকৃতির কোপ্তা তৈরি করে অন্য একটি পাত্রে
রাখুন। তারপর ডুবোতেলে কোপ্তা ভেজে নিন।
কড়াইতে এবার সমস্ত মসলা ঢেলে তেল দিয়ে ভালো করে কষিয়ে, কষানো মসলায় বানানো
কোপ্তা ছেড়ে দিন। এবার গরম মসলাগুঁড়া অথবা গরম মসলাগুঁড়া পানিতে মিশিয়ে কোপ্তার
ওপর ছড়িয়ে কড়াইটি ভালো মতো ঢেকে দিন।
হয়ে গেল চিতল মাছের কোপ্তা। এভাবে ১০ থেকে ১৫ মিনিট রাখার পর গরম গরম
পরিবেশন করুন।
দম চিতল
উপকরণ:
চিতল মাছের পেটি ৩-৪টে, (ধনেগুঁড়ো ১ চামচ, মৌরি ১ চামচ, জিরে ১/২ চামচ, কাঁচালঙ্কা ১-২টো) সব একসঙ্গে বাটা,
লঙ্কাগুঁড়ো ১ চামচ,
হলুদগুঁড়ো ১ চামচ,
আদা-রসুনবাটা ২
চামচ,
গরমমশলা ১ চামচ,
তেজপাতা ২টো,
দই ১/২ কাপ, হিং ১ চিমটে,
কিশমিশ ১ বড় চামচ,
চিনি ১ চামচ,
ঘি ১ বড় চামচ,
তেল পরিমাণ মতো,
নুন স্বাদমতো ।
প্রণালী:
মাছগুলো নুন, হলুদ মাখিয়ে ভেজে রাখুন । কড়াইতে তেল ও অল্প ঘি
দিয়ে তেজপাতা ও হিং ফোড়ন দিন । আদা, রসুন ও চিনি দিয়ে নেড়ে বাটা মশলা দিয়ে কষতে থাকুন
। গুঁড়ো মশলা জলে গুলে দিন । এবার দই ফেটিয়ে দিয়ে কষতে থাকুন । অল্প জল দিন । ফুটে
উঠলে মাছগুলো দিয়ে তাতে বাকি ঘি ও গরমমশলা কিশমিশ ছড়িয়ে কড়াইয়ে ভাল করে ঢেকে খুব
কম আঁচে দমে বসিয়ে রাখুন ৫-৭ মিনিট । মাখা মাখা হলে নামিয়ে নিন ।
চিতল পেটি ভাপা
উপকরণ
চিতল পেটি – ৬ টা
টক দই – ২ টেবিল চামচ
মিষ্টি দই – ২ টেবিল চামচ
সর্ষেবাটা – ৩ টেবিল চামচ
নুন – স্বাদমতো
কাঁচালংকাবাটা – ৬ টা
নারকেল কোরা – ১/২ কাপ
হলুদ গুড়ো – ১ চা চামচ
আদা বাটা – ২ চা চামচ
সর্ষের তেল – ১/২ কাপ
টক দই – ২ টেবিল চামচ
মিষ্টি দই – ২ টেবিল চামচ
সর্ষেবাটা – ৩ টেবিল চামচ
নুন – স্বাদমতো
কাঁচালংকাবাটা – ৬ টা
নারকেল কোরা – ১/২ কাপ
হলুদ গুড়ো – ১ চা চামচ
আদা বাটা – ২ চা চামচ
সর্ষের তেল – ১/২ কাপ
প্রণালী
চিতল পেটি নুন হলুদ মাখিয়ে আধ ঘন্টা রাখতে হবে | এরপর বাকি সব উপকরণ
মাখিয়ে রাখতে হবে আরো আধ ঘন্টা | এই মশলা মাখা মাছ কলাপাতায় মুড়ে নিয়ে সুত দিয়ে
বেঁধে দিতে হবে | টিফিন কৌটোতে করে প্রেশার কুকারে স্টিম করতে পারেন অথবা একটা মাইক্রো
ডিশ-এ মাছগুলো সাজিয়ে ১০০% পাওয়ারে ১০ মিনিট মাইক্রো করতে পারেন মাইক্রো মোড-এ |
আর কিছুই যদি না চান
তবে কড়াতে জল ফুটতে দিয়ে কলাপাতায় মোড়া মাছ একটা পাত্রে ঢাকা দিয়ে মিনিট ২০ রান্না
করতে হবে | রান্না হয়ে গেলে কাঁচা সর্ষের তেল ছড়িয়ে গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করতে
হবে |
চিতল মাছের মুইঠ্যা
উপকরণ
চিতল মাছের গাদা (পিঠের দিকটা ) -৫০০ গ্রাম সিদ্ধ আলু - ২টা
(মাঝারি সাইজ ) সরষের তেল -পরিমাণ মত পিঁয়াজ ( মাঝারি ) -২ টি আদা - ১ ইঞ্চি - লঙ্কার গুঁড়া ,জিরার গুঁড়া, ধনের গুঁড়া , হলুদ গুঁড়া , গরম মসলা , ঘি পরিমাণ মত । নুন স্বাদ অনুসারে
প্রণালী
মাছের গাদাটা পিস করা চলবে না গোটা রাখতে হবে ।
বটি বা ছুড়ি দিয়ে মাঝখানের স্পাইনাল কর্ডটা কেটে ফেলে দিতে হবে ।
বাজারে মাছওলাদের মুইঠ্যা করব বললে ওরাই কেটে দেয় । এবার ভাল করে ধুয়ে চামচ দিয়ে
গাদা থেকে মাছ কুড়ে বের করে নিতে হবে । এর একটা কায়দা আছে । এমন করে কুড়তে হবে যাতে কাঁটাগুলো উঠে না আসে । শুধু মাছটাই আসে ।
একটু খেয়াল করে চামচ একদিকেই টানতে হবে । নইলে কাঁটা মিশে
যাবে
মাছে । এবার ঐ মাছে সাথে সিদ্ধ আলু আর নুন ভাল করে মিক্স করে গোল গোল মণ্ড বানাও । একটি পাত্রে জল গরম বসাও । জল ফুটলে ওতে মণ্ডগুল ছেড়ে দাও । মিনিট দশেক ফুটলেই মণ্ডগুলো শক্ত হয়ে যাবে ।এবার জল ঝরিয়ে মণ্ডগুলো
চার পিস করে কেটে রাখ । কড়াইতে তেল গরম হলে ওতে পিস করা মণ্ডগুলি
অল্প লাল করে ভেজে নাও । এবার ঐ তেলেই পেঁয়াজ বাটা , আদা বাটা , জিরা গুঁড়া ,
লঙ্কা গুঁড়া ,
ধনে গুঁড়া , হলুদ দিয়ে মসলাটা
কষে নাও । এবার ওতে পরিমাণ মত নুন ও জল দাও । ঝোল ফুটে
উঠলে ভেজে রাখা মণ্ডগুলো দিয়ে দাও । নামাবার আগে ঘি , গরম মসলা ওপর থেকে ছড়িয়ে দাও । খুব বেশী
ঝোল রাখা যাবে না । চিতলের মুইঠ্যা তৈরি । টেস্ট করে দেখ
স্বাদটা কেমন হল । ঝরঝরে সাদা ভাতের সাথে জমিয়ে খাও আর
বন্ধুদেরও ডেকে নাও ।
চিতল মাছের কোফতা
কারি
উপকরণ:
- চিতল মাছ আধা কেজ়ি (মাছের টুকরা লবণ মেশানো সিরকা দিয়ে ধুয়ে
পানি ঝরিয়ে কাঁটাচামচ দিয়ে কাঁটা ছাড়িয়ে নিন)।
- কর্নফ্লাওয়ার ১ টেবিল-চা্মচ অথবা আলু ভর্তা ১ কাপ।
- কাঁচামরিচ-বাটা ২টি।
- গরম মসলা ও ধনেগুঁড়া আধা চা-চামচ করে।
- জ়িরাবাটা ১ চা-চামচ।
- আদা ও রসুন বাটা ১ চা-চামচ করে।
মাছের কিমার সঙ্গে উপরের সব মসলা ও আধা চা-চামচ লবণ নিয়ে হাত দিয়ে
ভালো করে কচলে মিশিয়ে নিন। হাতের এক মুঠি পরিমাণ কিমা নিয়ে বল বানিয়ে নিন।
হাঁড়িতে এক লিটার পানি দিন। পানি ফুটলে মাছের বলগুলো দিন।
কোফতার রং পরিবর্তন (চার মিনিট লাগে সাধারণত) হলে চুলা বন্ধ করে পানি
থেকে তুলে রাখুন।
ঝোল বা গ্রেইভি করতে:
- তেল আধা কাপ।
- পেঁয়াজবাটা ১/৪ কাপ।
- হলুদ ও মরিচ বাটা ১ চা-চামচ করে।
- গরম মসলাগুঁড়া ১ চা-চামচ।
- ধনেবাটা ১ চা-চামচ।
- কাঁচামরিচ ৩টি।
- জ়িরাবাটা ১ চা-চামচ।
- আদা ও রসুন বাটা ১ চা-চামচ করে।
- ধনেপাতা-কুচি ২ টেবিল-চামচ।
- পেয়াজঁ-বেরেস্তা ১ টেবিল-চামচ।
কড়াইতে তেল গরম করে সব বাটা ও গুঁড়া মসলা দিন। পানি দিয়ে মসলা ভালো
করে কষিয়ে কোফতা মসলার সঙ্গে মিশিয়ে ঢেকে অল্প আঁচে দুই মিনিট রাখুন।
তারপর এক কাপ পানি দিয়ে ঢেকে রান্না করুন। বেশি নাড়া যাবে না। তেলের
উপরে উঠলে ধনেপাতা, কাঁচামরিচ বেরেস্তা দিয়ে দুই মিনিট দমে রাখতে হবে।
No comments:
Post a Comment