Friday, December 8, 2017


 ‘হুইট গ্রাস’ / Wheat Grass

জিনিসটা পুরোই প্রাকৃতিক, আমাদের দেশে হাত বাড়ালেই পাওয়া যায়।  হাজার পদের ওষুধের জায়গায় একাই কাজ করে। অর্থাৎ হাজার ওষুধের সমান একটি তৃণ। এটি হচ্ছে আমাদের অতি পরিচিত গমের কচি চারা, যাকে গমের ঘাস বলে চিনি আমরা। ইংরেজি নাম হুইটগ্রাস  
বিস্ময়কর এক প্রাকৃতিক খাবার এটি। যার গুণের কথা বলে শেষ করা যাবে না। ১৯৩০ সাল থেকে পশ্চিমা বিশ্বে এর ব্যবহার শুরু হয় ফুড সাপ্লিমেন্ট হিসেবে। তবে ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায় ৫ হাজার বছর আগে মিসরীয় এবং মেসোপটেমীয় সভ্যতায়ও হুইটগ্রাসের গুণপনার কথা জানা ছিল অভিজাতদের কাছে।  
ধারণা করছি, এরই মধ্যে আপনার মনে অনেক প্রশ্নের জন্ম হয়েছে গম ঘাস নিয়ে (যদি এর আগে ব্যাপারটা না জেনে থাকেন)।  এর গুণপণা সম্পর্কে এক কথায় বলা যায়, যত ধরনের খনিজ পদার্থের নাম আপনি শুনেছেন এ যাবত তার প্রায় সবই আছে এতে। 
এই প্রাকৃতিক ঘাসে আছে ভিটামিন এ, বি কমপ্লেক্স, সি, , ১ ও কে। আছে প্রোটিন ও ১৭ ধরনের অ্যামাইনো এসিড। গমের ঘাসে আরো আছে পটাশিয়াম, ডায়েটারি ফাইবার, থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, নায়াসিন, বি-৬, প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড, আয়রন, জিংক, কপার, ম্যাংগানিজ। আছে থাইরয়েডের সমস্যা ঠেকানোর উপাদান সেলেনিয়াম। 
এছাড়া, প্রতি ২৮ গ্রাম (যাকে বলে এক শট) হুইটগ্রাসে আছে ১ গ্রাম প্রোটিন।
সম্পূরক খাবার হিসেবে এটা আপনি দৈনিক গ্রহণ করতে পারেন। খাওয়ার নিয়মও খুব সহজ। গমের চারা গজানোর পর সেটা দুভাগ হওয়া শুরু হতেই সে ঘাস কেটে নিয়ে খেতে হয় জুস বানিয়ে। দিনে খালি পেটে ১-২ চা চামচই যথেষ্ট।

যেসব উপকারিতা রয়েছে
১.সজীব সতেজ ক্লোরোফিলের আধার হচ্ছে গম ঘাস। আর ক্লোরোফিল মানব দেহের জন্য খুবই উপকারি। এটি সবুজ গাছগাছারি ছাড়া আর কিছুতেই এভাবে পাওয়া সম্ভব নয়।
২. আপনার-আমার জানা প্রায় সব ধরনের খনিজ পদার্থের আধার এই ঘাসে আছে ভিটামিন
, বি কমপ্লেক্স, সি, , ১ ও কে। প্রতি ২৮ গ্রামে (এক শট) ১ গ্রাম প্রোটিন ছাড়াও আছে ১৭ ধরনের অ্যামাইনো এসিড। পটাশিয়াম, ডায়েটারি ফাইবার, থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, নায়াসিন, বি-৬, প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড, আয়রন, জিংক, কপার, ম্যাংগানিজ ও থাইরয়েড সংক্রান্ত সমস্যা ঠেকানোর উপাদান সেলেনিয়াম। ৩. হুইটগ্রাসের উপাদানের ৭০ ভাগই হলো বিশুদ্ধ ক্লোরোফিল। এটা রক্ত তৈরির অন্যতম উপকরণ।
৪. অনেক উপকারী এনজাইমে ভরপুর ক্লোরোফিল। এগুলো কোষের ক্ষতিকারক সুপারঅক্সাইড র‌্যাডিকেলগুলোকে ধ্বংস করতে পারে। কাজ করে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে। যার ফলে জীবদেহে বার্ধক্যজনিত পরিবর্তনগুলো ধীরেসুস্থে আসে।
৫. ক্লোরোফিল তৈরি হয় আলোর মাধ্যমে। সে মতে আলোর ভেতরকার শক্তি পর্যাপ্ত মাত্রায় মানবদেহে প্রবেশ করতে পারে গমের ঘাসের মাধ্যমে।
৬. গমের ঘাসের ক্লোরোফিল আবার সরাসরি মানবদেহে মিশে যায়। এখন পর্যন্ত এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার খবর জানা যায়নি।
৭. গবেষণায় দেখা গেছে, হুইটগ্রাসের ক্লোরোফিলের বাধায় মানবদেহে অপকারী ব্যাকটেরিয়া বেড়ে উঠতে পারে না।
৮. গমের ঘাসে থাকা ক্লোরোফিল প্রাকৃতিক অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এজেন্টের ভূমিকা পালন করে। শরীরের ভেতরে ও বাইরে এটি ব্যাকটেরিয়া নির্মূলে সমান কার্যকর।
৯. তরল ক্লোরোফিল আমাদের টিস্যুতে সরাসরি দ্রবীভূত হয়। টিস্যুকে নতুন করে গড়ে তুলতে চমৎকার কাজ করে তরল ক্লোরোফিল।
১০. বিভিন্ন সময়ে গ্রহণ করা হরেক কিসিমের ওষুধের বর্জ্য বা উচ্ছিষ্ট যা আপনার শরীরের জন্য বোঝা হয়ে থাকে, সেসবকে রীতিমতো ধুয়েমুছে পরিষ্কার রাখে গমের ঘাসে থাকা উপাদান।
১১. ওষুধের বর্জ্য ছাড়াও শরীরে থাকা অন্যান্য দূষিত পদার্থকেও পরিষ্কার করে হুইটগ্রাসের ক্লোরোফিল। এই সুবিধা পায় আপনার অতি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ কিডনিও। অর্থাৎ কিডনি পরিষ্কারকের কাজটিও ভালমতোই করে।
১২. এর ক্লোরোফিল আপনার রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য তাই গমের ঘাসের জুস একটি আদর্শ হার্বাল দাওয়াই।
১৩. ত্বকে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ, আলসার ছাড়াও কানের জ্বালাপোড়া, চামড়ার পুনর্গঠন, সাইনোসাইটিস ইত্যাদির চিকিৎসায় ক্লোরোফিল বেশ ইতিবাচক প্রভাবকের কাজ করে।

১৪. আপনার হৃদপিণ্ড আর ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বাড়াতে চাইলে গম ঘাসের জুস অবশ্যই গ্রহণ করুন।
১৫. যাদের রক্তে হিমোগ্লোবিনের সমস্যা আছে, তারাও এর থেকে উপকার পাবেন। হুইটগ্রাস রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ায়।
১৬. রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণও বাড়াতে পারে।
১৭. মানুষ ছাড়াও যেকোনো প্রাণীরও সব ধরনের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে পারে গমের ঘাস।
১৮. গাজরের মতো অন্য যেকোনো সবজির চেয়ে কয়েক গুণ বেশি পুষ্টিকর গমের ঘাস।
১৯. বিদেশে পোষা পাখিসহ খামারের মুরগিকেও পোল্ট্রি ফিড হিসেবে খাওয়ানো হয় এটা- উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য।
২০. খুসকি দূর করতে চাইলেও গমের ঘাসের সাহায্য নিতে পারেন। গমের ঘাসের বাটা মাথায় মেহেদির মতো মাখিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট ঢেকে রেখে দিন। খুসকি দূর হবে।
২১. প্রচুর ম্যাগনেশিয়াম থাকায় কোষ্ঠকাঠিন্য তাড়াতেও পারঙ্গম গমের ঘাসের জুস।
২২. শরীরে থাকা অপকারী ভারি ধাতুও দূর করতে পারে।
২৩. যাদের মুখে মুখে পায়োরিয়ার সমস্যা আছে তারা গমের ঘাসের মিশ্রণ লাগিয়ে দেখতে পারেন ক্ষতস্থানে। এই ঘাস মুখে নিয়ে চিবুলে উপকার পাবেন।
২৪. আর্থারাইটিসের চিকিৎসাতেও গম ঘাস কার্যকরী। আক্রান্ত অংশে ১০০ গ্রাম হুইট গ্রাসের দ্রবণ বানিয়ে সেটাকে তুলোয় ভিজিয়ে প্রয়োগ করতে হবে- সেরে না যাওয়া পর্যন্ত।
২৫. গমের ঘাসের জুস সেবনে শরীরে শক্তি ও কর্মক্ষমতা বাড়বে। এ ছাড়া এতে থাকা অক্সিজেন উপকরণ মন খারাপ ভাব তাড়িয়ে ফুরফেুরে মেজাজ আনতেও কাজ করে। সুতরাং, আসুন নিয়মিত গ্রহণ করি গমের ঘাসের জুস। 
প্রস্তুত প্রণালী
বিদেশে গমের ঘাসের ট্যাবলেট বা জুস কিনতে পাওয়া যায়, পাওয়া যায় পাউডার হিসেবেও। আমাদের দেশেও খুঁজলে দু-একটা জায়গায় গমের ঘাসের পাউডার বা জুস মিলবে। তবে বিশাল জনগোষ্ঠীর এই দেশে (এবং বিদেশে বসবাসরত দেশিরাও) ঘরে ঘরে এটা প্রয়োজন। তাই আসুন, জেনে নেই ঘরে বসেই কী ভাবে সব  সময়ে পাবেন তাজা গমের ঘাস আর এর থেকে তৈরি জুস 


মাংস কিমা করার সাধারণ গৃহস্থালী যন্ত্রেও করে নিতে পারেন গমের পাতার জুস
১. ভালো মানের নিরোগ গমের বীজ কিনে আনুন সংগ্রহ করুন।
২. গমগুলো (মানে বীজ) ভালো করে ধুয়ে ভিজিয়ে রাখুন এক রাত।
৩. পরদিন বীজগুলোকে ভালো করে ধুয়ে একটা বাক্সে রাখুন। খেয়াল রাখবেন যাতে বীজের আর্দ্রতা ঠিক থাকে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি স্প্রে করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই শুকিয়ে ফেলা যাবে না।
৪. দু-একদিনেই দেখবেন বীজে ছোট ছোট সাদা শেকড় গজাচ্ছে। এরপর ট্রেতে সারযুক্ত মাটির একটা পরত বিছিয়ে দিন (এই কায়দাটা নিজে জানলে ভাল, নাহলে কৃষিকর্মে অভিজ্ঞ আত্মীয়-বন্ধুর পরামর্শ নিন বা বইপত্র কিংবা নেট ঘেঁটে জেনে নিন)। আমরা জানি, মাটি ছাড়াও গজাতে পারে গমের চারা। তবে মাটিতে তাড়াতাড়িই গজাবে এগুলো।
৫. যে ট্রেতে মাটি রাখবেন অর্থাৎ আপনার অতি ক্ষুদ্র গমক্ষেতটি বানাবেন- সেটি নিচে ছিদ্রযুক্ত হয় (ফুরে টবের মতো) যাতে পানি বেড়িয়ে যেতে পারে।
৬. শেকড়যুক্ত বীজগুলোকে (ইংরেজিতে বলে স্প্রাউট) মাটিতে সমানভাবে ছড়িয়ে দিন। বীজগুলোকে মাটিতে হাল্কা একটু চেপে অর্থাৎ দাবিয়ে দিন। কিংবা শিকড় গজানো বীজগুলোর
উপর ঝুরঝুরে মাটির আরেকটি পরত দিয়ে দিন।
৭. এবার পানি স্প্রে করুন। এর অর্থা মাটিকে ভেজা রাখতে হবে। তবে কোনো অবস্থাতেই যেন পানি জমে না থাকে ট্রেতে। ট্রেটাকে ভেজা পত্রিকা দিয়ে ঢেকে রাখতে পারুন- এতে আদ্র ভাব বজায় থাকে। 
৮. সকাল বিকাল দুবেলা পানি স্প্রে করে যান। কদিনের মধ্যেই চারা গজাবে। ১০ দিনের মাথায় চারাগুলোর মাথা দুই ফালিতে ভাগ হওয়া শুরু হবে। অর্থাৎ জুস বানানোর উপযোগী হয়ে যাবে। এবার কাচি দিয়ে কেটে ভালো করে ধুয়ে ব্লেন্ডার বা জুসার-এ দিয়ে রস বের করে নিন। ব্লেন্ডার জুসার না থাকলে অন্য যে কোনো কায়দায় (পাটা-পতুায়) পিষে নিতে পারেন।
৯. এই রস বা জুসের সঙ্গে লবন, চিনি, আদা কিছুই কিছুই মেশাতে হবে না।
১০. একবারে দিন সাতেকের জন্য বানিয়ে ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে পারেন জুস। প্রতিদিন খালি পেটে ৩০ মিলি পরিমাণ করে গ্রহণ করুন।
১১. ভাল বোধ করলে বা আগ্রহ থাকলে একটু বেশিও নিতে পারেন। আবার কারও কারও অস্বস্তি লাগতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রথম দিকে একটু কম করে শুরু করা যেতে পারে।
১২. দুনিয়ার লাখো কোটি মানুষ এই জিনিস গ্রহণ করে উপকৃত হচ্ছে। সুতরাং আপনিই বা বাদ যাবেন কেন? শুরু করে দিন, যত দ্রুত সম্ভব। সূত্র: রেফারেন্স.কম, ফুডিগুডগার্ল.কম, লাইভহুইটগ্রাস.কম

সুত্র : কালের কন্ঠ


No comments:

Post a Comment