মটরশুঁটি/Green Pea
মটর শাক/Motor
Shak
মটরশুঁটি হলো লেগিউম জাতীয় উদ্ভিদ Pisum
sativum এর গোলাকার বীজ। প্রতিটি মটরশুঁটির মধ্যে বেশ কয়েকটি বীজ থাকে। যদিও
এটি এক প্রকারের ফল, এটি মূলত সবজি হিসাবে রান্নায় ব্যবহৃত হয়।
P. sativum
একটি
একবর্ষজীবী উদ্ভিদ। এটি বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে শীত মৌসুমে চাষ করা হয়ে থাকে।
গড়ে প্রতিটি মটরশুঁটির ওজন ০.১ হতে ০.৩৬ গ্রাম। মটরশুটির বীজকে সবজি হিসাবে তাজা,
জমাটবাঁধা,
অথবা
ক্যানে ভর্তি করে পরে রান্নায় ব্যবহার করা হয়।
বুনো মটরশুঁটি মধ্যপ্রাচ্য এবং নিকটপ্রাচ্যে
খাওয়া হয়।
প্রাচীন পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন অনুসারে নিওলিথিক যুগের সিরিয়া,
তুরস্ক,
এবং
জর্ডান এ মটরশুঁটির খোঁজ পাওয়া গেছে। প্রাচীন মিশরের নীল নদের ব-দ্বীপ এলাকায়
প্রায় ৪৮০০-৪৪০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে,
এবং উচ্চ মিশরে ৩৮০০-৩৬০০
খ্রিস্টপূর্বাব্দে এর ব্যবহারের কথা উল্লেখ পাওয়া যায়। জর্জিয়াতে খ্রিস্টপূর্ব
৫ম সহস্রাব্দের দিকে এর ব্যবহার হতো। এসব এলাকার পূর্ব দিকে মটরশুঁটির ব্যবহার
অনেক পরে শুরু হয়েছে। আফগানিস্তানে মটরশুঁটির নজীর পাওয়া যায় ২০০০
খ্রিস্টপূর্বাব্দ নাগাদ। পাকিস্তান ও উত্তর-পশ্চিম ভারতবর্ষের হরপ্পা এলাকায়
২২৫০-১৭৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে মটরশুঁটির চাষ হতো। গাঙ্গেয় অববাহিকা এবং
দক্ষিণ ভারতে খ্রিস্টপূর্ব ২য় সহস্রাব্দ নাগাদ মটরশুঁটির চাষ শুরু হয়।
মটরশুঁটি
(কাচা অবস্থায়)
প্রতি ১০০ গ্রাম (৩.৫ আউন্স) পুষ্টিগত মান
শক্তি ৩৩৯
কিজু (৮১ kcal)
শর্করা
14.5 g
চিনি 5.7 g
খাদ্যে ফাইবার 5.1 g
স্নেহ পদার্থ 0.4 g
প্রোটিন 5.4 g
ভিটামিনসমূহ
ভিটামিন এ সমতুল্য (5%)
38 μg
বেটা ক্যারোটিন (4%) 449 μg
থায়ামিন (বি১) (26%) 0.3 mg
রিবোফ্লাভিন (বি২) (8%) 0.1 mg
ন্যায়েসেন (বি৪) (14%) 2.1 mg
প্যানটোথেনিক অ্যাসিড (বি৫) (2%) 0.1 mg
ভিটামিন বি৬ (15%) 0.2 mg
ফোলেট (বি৯) (16%) 65 μg
ভিটামিন সি
(48%) 40.0 mg
চিহ্ন ধাতুসমুহ
ক্যালসিয়াম (3%) 25.0 mg
লোহা (12%) 1.5 mg
ম্যাগনেসিয়াম (9%) 33.0 mg
ফসফরাস (15%) 108 mg
পটাশিয়াম (5%) 244 mg
দস্তা
(13%) 1.2 mg
একক
μg = মাইক্রোগ্রামসমূহ • mg
= মিলিগ্রামসমূহ
IU = আন্তর্জাতিক এককসমূহ
Percentages are
roughly approximated using US recommendations for adults.
Source: USDA
Nutrient Database
সুস্বাদু মটরশুঁটি পুষ্টির শক্তিঘর হিসেবেই
পরিচিত। পোলাওয়ের সাথে, নুডলসের
সাথে, সিদ্ধ করে
ইত্যাদি নানা ভাবেই খাওয়া হয় মটরশুঁটি। সহজলভ্য ও জিভে জল আনা এই সবজিটির
ক্যালোরির পরিমাণ খুব থাকলেও পুষ্টিতে ভরপুর থাকে। মটরশুঁটিতে ভিটামিন
ও মিনারেল
থাকার পাশাপাশি ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট,
লুটেইন এবং জেনান্থিন ও থাকে। মটরশুঁটির স্বাস্থ্য উপকারিতার বিষয়ে
জেনে নিই চলুন।
১। ওজন কমতে সাহায্য করে:
মটরশুঁটি ফাইবারে পরিপূর্ণ হওয়ায় দীর্ঘক্ষণ পেট
ভরা থাকতে সাহায্য করে। ফলে অস্বাস্থ্যকর ¯œ্যাক্স খাওয়া থেকেও বিরত থাকা যায়। তাছাড়া এর
ক্যালোরির পরিমাণও কম থাকে। এক কাপ মটরশুঁটিতে আনুমানিক ১১৮ ক্যালোরি থাকে।
২। হৃদপিন্ডের জন্য ভালো:
মটরশুঁটিতে নিয়াসিন থাকে, যা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে
সাহায্য করে। এছাড়াও মটরশুঁটিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা রক্তনালীতে ব্লক হওয়া
প্রতিরোধ করে। মটরের সুপ ব্লাডপ্রেশার কমাতে এবং হৃদরোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
৩। কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে:
আপনার যদি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকে তাহলে
পেট পরিষ্কারের জন্য ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিৎ। কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্ত হতে
ফাইবার সমৃদ্ধ মটরশুঁটি খেতে পারেন। এছাড়াও মটরশুঁটি বিপাকের উন্নতিতেও সাহায্য
করে।
৪। হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়:
মটরশুঁটিতে ভিটামিন কে থাকে যা ক্যালসিয়ামের
শোষণে সাহায্য করে, ফলে
হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সাহায্য করে। ১ কাপ সিদ্ধ মটরশুঁটিতে দৈনিক ভিটামিন কে
এর চাহিদার ৫০ শতাংশ পূরণ হয়। এছাড়াও মটরশুঁটিতে ভিটামিন বি ১ ও ফলিক এসিড ও থাকে
যা অষ্টিওপোরোসিস প্রতিরোধে সাহায্য করে।
৫। বয়সের লক্ষণ প্রতিরোধ করে:
বাতাসের সং¯পর্শে ধাতুতে যেমন মরিচা পড়ে তেমনি আমাদের শরীর
ও ফ্রি র্যাডিকেলের ক্ষতির সম্মুখীন হয়। মটরশুঁটির অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফ্রি র্যাডিকেলের
ক্ষতি কমায় এবং শরীর থেকে ক্ষতিকর পদার্থ বের করে দেয়। এ কারণেই বেশি বেশি
মটরশুঁটি খাওয়া ভালো যাতে বয়স বৃদ্ধির প্রক্রিয়াটি ধীর গতির হয়।
৬। ডিপ্রেশন কমতে সাহায্য করে:
এফেক্টিভ ডিজঅর্ডার নামক জার্নালে প্রকাশিত
প্রতিবেদনে জানা যায় যে, ফলেট
নামক ভিটামিন কম মাত্রায় গ্রহণের ফলে বিষাদগ্রস্থতার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। ডিপ্রেশনে
যারা ভোগেন তাদের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।
মেজাজের উন্নতি ঘটাতে সিদ্ধ মটরশুঁটি খেতে পারেন।
৭। পাকস্থলীর ক্যান্সার প্রতিরোধ করে:
মটরশুঁটিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও
অ্যান্টিইনফ্লামেটরি উপাদান থাকে বলে আপনাকে স্বাস্থ্যবান রাখতে ও ক্যান্সারের
ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এর কারণ মটরশুঁটিতে কোমেস্ট্রোল নামক পলিফেনলিক যৌগ থাকে
যা পাকস্থলীর ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানোর সাথে সম্পর্কিত।
এছাড়াও মটরশুঁটিতে ভালো মানের ভিটামিন সি থাকে
বলে ইমিউনিটির উন্নতি ঘটাতে সাহায্য করে। মটরশুঁটি আয়রনে পরিপূর্ণ থাকে বলে
অ্যানেমিয়া ও ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে। প্রোটিন, ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ
হওয়ায় শিশুর দেহের বৃদ্ধিতেও চমৎকার ভাবে সাহায্য করে মটরশুঁটি। আলঝেইমার্স, ব্রংকাইটিস ও ক্যান্ডিডা প্রতিরোধেও
সাহায্য করে মটরশুঁটি। ভিটামিন এ থাকে মটরশুঁটিতে যা চোখের স্বাস্থ্যের জন্য
উপকারী।
মটর শাক ভাজি
উপকরণঃ
১. মটর শাক – হাফ কেজি
২. পেঁয়াজ কুচি –
হাফ কাপ
৩. কাঁচা মরিচ চেরা
– ৬ টি
৪. রসুন কুচি – ১
টে. চামচ
৫. সয়াবীণ তেল – হাফ
কাপ
৬. শুকনা মরিচ ভাজা
– ২ টি
৭. লবণ – স্বাদমতো
প্রণালীঃ
১. মটর শাক ভালো করে ধুয়ে কুচি
কুচি করে কেটে নিন
২. এবার শাক গুলো
পানি ও লবণ দিয়ে সিদ্ধ করে নিন
৩. নুডলস্ ছাকনীতে
করে পানি ঝড়িয়ে নিন
৪. কড়াইয়ে তেল দিন; তেল গরম হলে রসুন কুচি দিন
৫. রসুন বাদামী হলে
পেঁয়াজ ও কাঁচা মরিচ দিন
৬. পেঁয়াজ বাদামী
হলে পানি ঝড়ানো কলমী শাক ও লবণ দিয়ে ভাজুন
৭. শুকনা মরিচ হাত
দিয়ে ভেঙ্গে ভেঙ্গে দিন
৮. লাল লাল করে ভেজে
তুলে পরিবেশন করুন
টাকি
মাছ দিয়ে মটরশাক ভাজি
উপকরণ
মটরশাক
২ আঁটি (শাক বাছার সময় শুধু আগার দিকের নরম পাতা নেবেন। নয়তো ভাজি খরখরে আর
বিস্বাদ হবে)। বড় টাকি মাছ ৪টি। মাঝারি আকারের পেঁয়াজ ১টি কুচি করা। রসুন ৩ কোয়া,
কুচি করা। হলুদ সামান্য। কাঁচামরিচ ৭-৮টি
(পছন্দ
অনুযায়ী কম বেশি দিতে পারেন)। লবণ স্বাদমতো। তেল পরিমাণমতো।
পদ্ধতি
শাক
বেছে নিয়ে মিহিকুচি করে কেটে ধুয়ে রাখুন। টাকি মাছের আঁশ ছাড়িয়ে পেটের ময়লা সাফ
করে ধুয়ে লবণ ও হলুদ মাখিয়ে তেলে হালকা করে ভেজে তুলতে হবে। মাছ টুকরা করবেন না।
মাছ
ঠাণ্ডা হলে ভালো করে কাটা বেছে, হাত দিয়ে ভেঙ্গে ঝুরিঝুরি করে নিন।
প্যানে
বা কড়াইয়ে তেল গরম করে পেঁয়াজকুচি ও রসুনকুচি দিয়ে বাদামি রং করে ভাজুন।
তারপর
কাটা ছাড়ানো টাকি মাছ আর সামান্য একটু হলুদ দিয়ে ভাজা ভাজা করে তিনভাগের দুইভাগ
মাছ তুলে রাখতে হবে আর বাকিটার মধ্যে কুচানো শাক দিয়ে দিতে হবে।
সঙ্গে
লবণ আর কাঁচামরিচ দিন।
যারা
ঝাল খেতে পারেন না, তারা
মরিচ আরও পরে দিতে পারেন।
শাক
ভাজতে থাকুন মাঝারি আঁচে। কারণ এই শাক সিদ্ধ হতে একটু সময় নেয়।
প্রায়
হয়ে এলে বাকি ভাজা মাছ দিয়ে ভালো করে মেশান। হাল্কা ভেজা ভেজা থাকতেই নামিয়ে নিন।
মনে
রাখবেন, এই শাক
একদম ঝরঝরে করে ভাজি করলে খেতে ভালোলাগে না আর মাছের পরিমাণ কম হলেও ভালোলাগে না।
শোল
মটরের ঝোল
উপকরণ : শোল মাছ ৮-১০ টুকরা, মটরশুঁটি আধা কাপ, টমেটো ৪-৫ টুকরা (৩টি), আলু ছোট টুকরা করে কাটা ১ কাপ, তেল কোয়ার্টার কাপ, হলুদ গুঁড়া ১ চা চামচ, মরিচ গুঁড়া ১ চা চামচ, পেঁয়াজ কুচি কোয়ার্টার কাপ, কাঁচামরিচ ফালি করে কাটা ৪-৫টি, ধনেপাতা কুচি প্রয়োজন মতো, লবণ স্বাদ অনুযায়ী।
প্রস্তুত প্রণালি : প্যানে তেল দিয়ে পেঁয়াজ
কুচি ও আলু ভেজে নিতে হবে। এতে সামান্য পানি দিয়ে গুঁড়া মসলা মিশিয়ে কষিয়ে নিতে
হবে। শাক ও টমেটো যোগ করুন। ভালো মতো কষানো হলে পরিমাণমতো পানি দিয়ে ঝোল তৈরি
করুন। পানি ফুটে উঠলে মটরশুঁটি ও কাঁচামরিচ দিয়ে মৃদু আঁচে চুলায় রাখতে হবে। হয়ে
এলে ধনেপাতা দিয়ে নামিয়ে পরিবেশন করুন।
মটরশুঁটির
চটপটি
উপকরণ : মটরশুঁটি ২ কাপ, আলু টুকরা করে কাটা ১ কাপ, ভাজা ধনে গুঁড়া ১ চা চামচ, জিরা গুঁড়া ১ চা চামচ, শুকনা মরিচ গুঁড়া ১ চা চামচ, তেঁতুলের মাড় আধা কাপ, পেঁয়াজ কুচি আধা কাপ, ধনে পাতা কুচি ২ টেবিল চামচ, কাঁচামরিচ কুচি ১ টেবিল চামচ, চিনি সামান্য, লবণ স্বাদমতো।
প্রস্তুত প্রণালি : আলু ও মটরশুঁটি সিদ্ধ করে
সব মসলা মেশাতে হবে। পরিমাণমতো পানিতে দিয়ে জ্বাল দিতে হবে। ফুটে উঠলে তেঁতুল মাড়
ও চিনি দিয়ে নামাতে হবে। পাত্রে ঢেলে পেঁয়াজ কুচি, মরিচ কুচি ও ধনে পাতা কুচি দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন
করতে হবে।
মটরশুঁটির
সন্দেশ
উপকরণ : মটরশুঁটি সিদ্ধ করে বাটা ২ কাপ, ছানা ১ কাপ, কনডেন্সড মিল্ক ১ কাপ, , চিনি আধা কাপ, কিশমিশ ১ টেবিল চামচ, ভাজা কাজু বাদাম গুঁড়া আধা কাপ, এলাচ গুঁড়া আধা চা চামচ, ঘি ১ কাপ, জাফরান ভেজানো পানি ১ টেবিল চামচ।
ক্ষীরসা আধা কাপ
প্রস্তুত প্রণালি : প্যানে ঘি গরম করে মটরশুঁটি
বাটা, এলাচ গুঁড়া ও
কিশমিশ দিয়ে ভালোভাবে নাড়তে হবে,
যেন লেগে না যায়। এবার এতে ছানা যোগ করুন। মিশ্রণটিতে বাকি সব উপকরণ
ঢেলে নাড়তে থাকুন। ঘন ও আঠালো হয়ে এলে জাফরান ভেজানো পানি ঢেলে আরও কিছুক্ষণ
নাড়ূন। একটি ডিশে অল্প ঘি মাখিয়ে মিশ্রণটি ঢেলে দিন। ঠাণ্ডা হলে সন্দেশ আকৃতিতে
কেটে পরিবেশন করুন।
আলু
মটরের ভুনা
উপকরণ : আলু কিউব করে কাটা ১
কাপ,
মটরশুঁটি ১ কাপ,
আদা-রসুন বাটা ১ চা চামচ,
এলাচ-দারুচিনি ২-৩ টুকরা,
ঘি আধা কাপ,
হলুদ গুঁড়া আধা চা চামচ,
মরিচ গুঁড়া আধা চা চামচ,
কাঁচামরিচ ফালি ২-৩টি,
পেঁয়াজ কুচি ১ টেবিল চামচ,
পেঁয়াজ বাটা ১ টেবিল চামচ,
জিরা গুঁড়া আধা চা চামচ,
লবণ স্বাদমতো।
প্রস্তুত প্রণালি : প্যানে ঘি দিয়ে এলাচ, দারুচিনি ও আলু ভেজে নিতে হবে। এবার সব
মসলা ও সামান্য পানি দিয়ে কষিয়ে নিতে হবে। মটরশুঁটি ঢেলে অল্প পানি দিয়ে মৃদু আঁচে
রান্না করুন। আলু-মটর সিদ্ধ হয়ে গেলে নামিয়ে ভাত বা রুটির সঙ্গে পরিবেশন করুন।
ছানা-মটরশুঁটির
ডালনা
উপকরণ : দুই কেজি দুধের ছানা, জিরা এক চিমটি, তেজপাতা কয়েকটি, গুঁড়া হলুদ, শুকনা মরিচ গুঁড়া, ধনে গুঁড়া, আদা বাটা, লবণ ও কাঁচা মরিচ স্বাদমতো।
প্রণালি : ছানার পানি ঝরিয়ে চিপে নিয়ে কিউব করে
কাটুন। এগুলো সোনালি রং করে ভেজে নিন। তেলে তেজপাতা ও জিরা ফোড়ন দিন। অল্প পানিতে
গুঁড়া হলুদ, মরিচ, জিরা, ধনিয়া ও আদা বাটা দিয়ে কষান। কষানো মসলায়
মটরশুঁটি ও কিউব করে কাটা আলু দিয়ে ২-৩ মিনিট নেড়ে ভেজে রাখা ছানার টুকরা দিয়ে আরও
দুই মিনিট ভাজুন। এরপর লবণ ও গরম পানি দিয়ে ঢেকে রাখুন কিছুক্ষণ। ঝোল ঘন হয়ে এলে
কাঁচা মরিচ আর ভাজা জিরার গুঁড়া দিয়ে নামান।
মটরশুঁটির
টক
উপকরণ : মটরশুঁটি ২ কাপ, মুরগির কিমা আধা কাপ, পেঁয়াজ বাটা ১ চা চামচ, রসুন
বাটা ১ চা চামচ,
মরিচ বাটা ১ চা চামচ,
আদা বাটা ১ চা চামচ,
টমেটো কুচি ৩টি,
হলুদ,
চিনি,
লবণ স্বাদমতো,
ফেটানো টক দই ১ টেবিল চামচ,
তেল পরিমাণমতো,
গরম মসলা গুঁড়া আধা চা চামচ।
যেভাবে তৈরি করবেন
১. মটরশুঁটি অল্প লবণ দিয়ে সিদ্ধ করে নিন।
২. তেল গরম হলে পেঁয়াজ, আদা, রসুন এক এক করে দিয়ে কষিয়ে নিন।
৩. মরিচ বাটা, টক দই ও টমেটো দিয়ে আরো একটু কষিয়ে কিমা দিন।
৪. মটরশুঁটি, হলুদ, লবণ, চিনি দিয়ে নেড়ে অল্প গরম পানি দিন।
৫. ফুটে উঠলে গরম মসলা দিয়ে নামিয়ে ফেলুন।
মটরশুঁটির
সালাদ
উপকরণ : মটরশুঁটি ১ কাপ, শসা কুচি আধা কাপ, টমেটো কুচি আধা কাপ, পেঁয়াজ কুচি ১ টেবিল চামচ, কাঁচামরিচ কুচি ২ চা চামচ, কাজু বাদাম/চীনা বাদাম (আধা ভাঙা) আধা
কাপ, টমেটো সস আধা
কাপ, গোলমরিচ গুঁড়া
আধা চা চামচ, ধনেপাতা
কুচি সামান্য, চিনি
আধা চা চামচ, লবণ
স্বাদ মতো।
প্রস্তুত প্রণালি : প্রথমে মটরশুঁটি ফুটন্ত গরম
পানিতে সিদ্ধ করে নিতে হবে। একটি ডিশে সব উপকরণ সুন্দরভাবে মিশিয়ে মটরশুঁটি ও
বাদাম দিয়ে পরিবেশন করুন মজাদার সালাদ।
মটরশুঁটি
ঘুগনি
উপকরণ : মটরশুঁটি ১ কাপ, ডাবলি ১ কাপ, পেঁয়াজ কুচি ১ কোয়ার্টার কাপ, ধনেপাতা
কুচি ১ টেবিল চামচ,
বিট লবণ আধা চা চামচ,
জিরা গুঁড়া ১ চা চামচ,
শুকনা মরিচ টালা ১ চা চামচ,
ধনে গুঁড়া ১ চা চামচ,
তেঁতুলের মাড় ১ টেবিল চামচ,
লেবু ১টি,
লবণ স্বাদমতো।
প্রস্তুত প্রণালি : ডাবলি ভিজিয়ে সিদ্ধ করে
নিতে হবে। মটরশুঁটিও সিদ্ধ করতে হবে। এবার ডাবলি ও মটরশুঁটি একত্রে সব গুঁড়া মসলা
দিয়ে মাখিয়ে নিতে হবে। পরিবেশনের সময় তেঁতুলের মাড়, কাঁচামরিচ, ধনেপাতা, পেঁয়াজ কুচি দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করতে হবে।
মটরশুঁটির
ক্ষীর
উপকরণ: মটরশুঁটি ২০০ গ্রাম, দুধ ২ লিটার, মাওয়া ১ কাপ, সুজি ১ টেবিল চামচ, এলাচ
৫-৬টি,
বাদাম কুচি ২ টেবিল চামচ,
চিনি ১ কাপ।
প্রণালি: প্রথমে মটরশুঁটি আধা কাপ দুধ দিয়ে
ব্লেন্ড করে নিন। দুধ ফুটিয়ে ঘন করুন। ফুটন্ত দুধে মটরশুঁটির পেস্ট ও সুজি দিয়ে
মৃদু আঁচে নাড়তে থাকুন। মিশ্রণ ঘন হয়ে এলে মাওয়া গুঁড়া করে দিন। চিনি ও এলাচ দিন। ঘন
হলে নামিয়ে ওপরে বাদাম দিয়ে ঠান্ডা করে পরিবেশন করুন।
মটর
পনির মাসালা
উপকরণ : পনির ৩০০ গ্রাম, মটর ১০০ গ্রাম, আদা বাটা ১/২ চামচ, রসুন বাটা ১/২ চামচ, জিরা গুঁড়া ১ চা চামচ, মরিচ গুঁড়া ১/২ চা চামচ, হলুদ গুঁড়া ১/২ চামচ, কাঁচামরিচ স্লাইস ৩ টুকরো, কাজুবাদাম
বাটা ৫০ গ্রাম,
দই ৫০ গ্রাম,
পেঁয়াজ বাটা ১০০ গ্রাম,
গরম মসলার পাউডার ১/২ চামচ,
টমেটো কেচাপ ১ চা চামচ,
ঘি অথবা বাটার ১ চা চামচ,
ধনে পাতা কুচি ১/২ চা চামচ,
আদা স্লাইস ১/২ চামচ।
প্রস্তুত প্রণালি : পনির কিউব করে কেটে তেলে
হাল্কা ভেজে পানিতে ডুবিয়ে রাখুন। মটরশুঁটি ডাল থেকে খোসা ছড়িয়ে মটর বের করে নিন।
চুলায় তেল গরম করে এর মধ্যে সব মসলা দিয়ে ভালোমতো কষিয়ে নিন। মসলা পানি দিয়ে
অন্ততপক্ষে ১/২ ঘণ্টা কষাতে হবে,
যাতে মসলার রঙ সাদা হলদে হয়। মসলা কষানো হলে এর মধ্যে পনির ও
মটরশুঁটি দিন। একটু পানি দিয়ে অল্প আঁচে ঢেকে দিয়ে ৫ মিনিট দমে থাকার পর গরম মসলা
পাউডার, ধনেপাতা
কুচি, আদা স্লাইস দিয়ে
পরিবেশন করতে হবে।দাম দিয়ে ঠান্ডা করে পরিবেশন করুন।
কিমা
মটরশুঁটির ঘুগনি
উপকরণ : মটরশুঁটি ২ কাপ, কিমা (চিকেন বা মাটন কিমা) ১/২ কাপ, পেঁয়াজ বাঁটা ১টা, রসুন বাঁটা ১ চা চামচ, মরিচ বাঁটা ১ চা চামচ, আদা বাঁটা ১ চা চামচ, টমেটো ১টা
(কুচানো),
হলুদ,
লবণ ও চিনি স্বাদমতো,
তেল পরিমাণ মতো,
টক দই (ফেটানো) ১ চা চামচ,
গরম মসলাগুঁড়া ১/২ চা চামচ।
প্রণালী : অল্প লবণ ও পানি দিয়ে মটরশুঁটি সেদ্ধ
করে নিন। কিমা হলুদ দিয়ে সেদ্ধ করে পানি ও কিমা আলাদা করে রাখুন। কড়াইতে তেল গরম
করে পেঁয়াজ, আদা
ও রসুন বাঁটা এক এক করে দিয়ে কষে নিতে হবে। এ বার মরিচ বাঁটা ও টক দই দিন। ভালো
করে কষে নিয়ে টমেটো মেশাতে হবে। আরো একটু কষে লবণ, চিনি, হলুদ ও কিমা দিন। তারপর কড়াইশুঁটি দিন।
নাড়াচাড়া করে কিমা সিদ্ধ পানি ঢেলে দিন। ফুটে উঠলে গরম মসলাগুঁড়া দিয়ে নামিয়ে
পরিবেশন করুন।
মটরশুঁটির
হালুয়া
উপকরণ : মটরশুঁটি ২ কাপ, ঘন দুধ ৩ কাপ, দারুচিনি ১ টুকরা, এলাচিগুঁড়া আধা চা-চামচ, লবঙ্গ ১টি, ঘি সিকি কাপ, কাজুবাদাম সিকি কাপ, কিশমিশ দেড় টেবিল-চামচ, নারকেল
কোরানো দেড় কাপ,
চিনি দেড় কাপ,
মাওয়া দেড় কাপ,
লবণ এক চিমটি।
প্রণালি : মটরশুঁটি ধুয়ে পানি ঝরিয়ে ১ কাপ
দুধ ও এক চিমটি লবণ দিয়ে সেদ্ধ করে পাটায় মিহি করে বেটে নিন।
কড়াইয়ে ঘি গরম করে দারুচিনি ও লবঙ্গের ফোড়ন
দিয়ে সিকি চামচ এলাচিগুঁড়া দিন। তারপর তাতে মটরশুঁটিবাটা দিয়ে সঙ্গে ২
টেবিল-চামচ কাজুবাদাম ও ১ টেবিল-চামচ ঘি দিয়ে ভালো করে নেড়ে নিন। এবার ৪
টেবিল-চামচ মাওয়া ও চিনি দিয়ে মিশিয়ে নাড়ুন। একটু ভাজা ভাজা হলে বাকি দুধ
দিয়ে অনবরত নাড়তে থাকুন। খেয়াল রাখবেন, যেন হাঁড়ির তলায় বা কড়াইয়ের তলায় হালুয়া
পোড়া না লাগে।
হালুয়া থেকে ঘি ছাড়া শুরু হলে নারকেল কোরা
দিয়ে অনবরত নাড়ুন। খুন্তি থেকে হালুয়া ছেড়ে দিয়ে তা যখন কড়াইয়ের মাঝখানে
জমা হবে এবং ঘি ছাড়বে, তখন
বাকি কাজুবাদাম দিয়ে নেড়ে বাটিতে বেড়ে ওপর থেকে সামান্য মাওয়া ও নারকেল কোরা
ছিটিয়ে ঠান্ডা হলে পরিবেশন করুন।