চাপিলা/গণি চাপিলা/Gudusia
chapra
চাপিলা (বৈজ্ঞানিক নাম: Gonialosa)
Clupeidae পরিবারের একটি গণের নাম একটি ছোট চ্যাপ্টা মাছ। দেখতে অনেকটা ইলিশ
মাছের মতো। এই মাছ বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলংকা,
পাকিস্তান
এ পাওয়া যায়।এটি Gudusia
chapra প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত। সুস্বাদু এবং সহজলভ্যতার কারণে চাপিলা অতি
জনপ্রিয়। এ ছাড়া এ মাছে থাকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আমিষ, , ক্যালসিয়াম, লৌহ ও ফসফরাস।
ভিটামিন
চাপিলার দেহ রুপালি রঙের, ঘাড়ের দিকটা ধূসর এবং পৃষ্ঠভাগ কিছুটা
কালচে। দৈর্ঘ্যে এ মাছ ২০ সেমি পর্যন্ত হতে পারে। এদের মুখ প্রশস্ত, দাঁত নেই। লেজ লম্বা, দ্বিধাবিভক্ত। উদরের অঙ্কীয়ভাগ সরু
এবং খাঁজকাটা। পৃষ্ঠীয় ও শ্রোণী পাখনা খাটো, পায়ু পাখনা লম্বা।
এ মাছ পানির উপরিভাগ থেকে খাদ্য সংগ্রহ করে।
প্লাঙ্কটন এদের প্রধান খাদ্য। বাংলাদেশের সর্বত্রই নদী, নালা, খাল, বিল, পুকুর এবং অন্যান্য স্বাদুপানির জলাশয়ে এদের
বাস। হ্রদ, পুকুর এমনকি ক্ষুদ্র পুকুরের (mini ponds) মতো আবদ্ধ
জলাশয়েও এদের চাষ করা যায়। চাপিলার বছরে দু’বার প্রজনন হয়, জুন-জুলাই এদের প্রধান প্রজনন মৌসুম।
সারা বিশ্বে সহজপাচ্য উন্নতমানের প্রাণিজ আমিষ
হিসাবে মাছের অবস্থান সর্বাগ্রে। ছোট
মাছে প্রচুর পরিমাণ আমিষ এবং মানব দেহের জন্য
অত্যাবশ্যকীয় ১০টি Amino acid আছে। মাছের আমিষ রক্তে কলেস্টারোলের
মাত্রা কমায়। মাছের দেহের ওমেগা-৩ Fatty acid রক্তের
অনুচক্রিকাকে জমাট বাঁধতে বাঁধা দেয় এবং ফুসফুসের প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে। মাছের
তেল কিডনীতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি কমায়। মাছে কম-বেশি ৭২% পানি, ১৯%
আমিষ, ৮% চর্বি, ০.১৫% ক্যালসিয়াম, ০.২৫%
ফসফরাস এবং ০.১০%Vitamin-A, B, C, D আছে। অনেকক্ষেত্রে বড় মাছের তুলনায় ছোট
মাছের
পুষ্টিমান বেশি হয়ে থাকে। ছোট মাছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস,
লৌহ
ও আয়োডিনের মত খনিজ পদার্থ, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় নতুন
মাত্রা যোগ করে। ক্যালসিয়াম দাঁত ও হাড় গঠনে সহায়ক। ফসফরাস নতুন কোষ সৃষ্টিতে
সহায়তা করে থাকে। লাইসিন ও সালফার সমৃদ্ধ অত্যাবশ্যকীয় Amino acid ছোট
মাছে বেশি পরিমাণে থাকে। অন্ধত্ব, গলগন্ড ও রক্তশূন্যতা দূরীকরণে ছোট
মাছের গুরুত্ব অপরিসীম। ছোট মাছে প্রচুর পরিমাণে Amino acid থাকে,
যা
শিশু, মহিলা ও বৃদ্ধ মানুষের চোখের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধিসহ রাতকানা রোগ
প্রতিরোধে সহায়তা করে। এ ছাড়া গর্ভবতী মহিলা ও দুগ্ধদানকারী মায়েদের রক্তশূন্যতা
থেকে রক্ষায় ছোট মাছ বিশেষ গুরুত্বপুর্ণ অবদান রাখে। গর্ববতী মহিলাদের ছোট মাছ
খাওয়ালে বাচ্চার মস্তিষ্ক, ত্বক, চোখের গঠন এবং
হাড় ও দাঁতের গঠন সঠিক ও স্বাভাবিক হয়।
আমাদের দেশে সাধারণতঃ যেভাবে মাছ কাটা ও ধোয়া
হয় তাতে মাছে বিদ্যমান অনেক
পুষ্টি ধুয়ে চলে যায়। মাছের দেহের বিভিন্ন অংশ পরীক্ষা
করে দেখা গেছে যে, মাছে
বিদ্যমান মোট Vitamin-A এর পরিমাণ চোখের অংশে সবচেয়ে বেশি
(৫৩%), পেটের অংশে ৩৯%, শরীরের সামনের অংশে ৭% এবং লেজের অংশে
১% থাকে। মাছ কাটার সময় মাথা কেটে ফেলে দিলে মাছে বিদ্যমান ভিটামিনের বেশির ভাগই
ফেলে দেয়া হয়। সেজন্য মাছ কাটার সময় বা ধোয়ার সময় এসব বিষয়ে বিশেষ সর্তকতা অবলম্বন
করতে হবে।
১. মাছ থেকে যে ক্যালরি পাওয়া যায়, তা ক্ষতিকর
চর্বিমুক্ত। মাছের ক্যালরি নির্ভর করে চর্বির মাত্রার ওপর। ডিম পাড়ার সময় হলে
মাছের দেহে তেলের পরিমাণ বেড়ে যায়। তখন ক্যালরির মাত্রাও বাড়ে। পুষ্টিচাহিদা
মেটাতে মাছ তাই খুবই কার্যকর।
২. মাছে
পর্যাপ্ত আমিষ আছে। মাংস থেকে আমিষ পেতে হলে এর সঙ্গে ক্ষতিকর চর্বি বা সম্পৃক্ত
চর্বিও গ্রহণ করতে হয়। মাছের ক্ষেত্রে এ সমস্যা নেই, বিশেষ করে শিশুদের বৃদ্ধি ও
বিকাশের জন্য আমিষের চাহিদা পূরণে প্রতিদিন মাছ বেশ ভালো ভূমিকা রাখতে পারে।
৩. মাছের
তেলে এ ছাড়াও রয়েছে প্রস্টাগ্লানডিন নামের রাসায়নিক উপাদান, যা ক্যানসারের
বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সাহায্য করে।
৪.
বুদ্ধির বিকাশ, স্মৃতিশক্তি
ও দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে ডিএইচএ চমৎকার ভূমিকা রাখতে পারে। যে মায়েরা মাছ খান নিয়মিত,
তাঁদের বুকের দুধের মাধ্যমে শিশুরা ডিএইচএ পর্যাপ্ত পরিমাণে পেতে
পারে। ছয় থেকে দশ বছর বয়সী শিশুরা পর্যাপ্ত ওমেগা ৩ এবং ডিএইচএ গ্রহণ করলে পরবর্তী
জীবনে মনোযোগ, স্মৃতিশক্তি ও মেধার পরিচয় দেয়। এটি
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে।
৫. আমিষ
ও ওমেগা ৩ চর্বি ছাড়াও মাছে রয়েছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদান, যেমন: সেলেনিয়াম,
ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস ইত্যাদি, যা বিপাক ক্রিয়া, দাঁত, পেশি ও হাড়ের গঠনে ভূমিকা রাখে। ছোট কাঁটাযুক্ত মাছ ক্যালসিয়ামের একটি
গুরুত্বপূর্ণ উৎস।
৬. মাছে
রয়েছে প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান, যা ক্যানসার, দীর্ঘমেয়াদি
প্রদাহজনিত রোগ যেমন: বাত, আর্থ্রাইটিস রোধে সাহায্য
করে, ত্বক ভালো রাখে। l প্রধান
পুষ্টিবিদ, বারডেম হাসপাতাল|
মস্তিষ্ক
বৃদ্ধি ও
বিকাশের জন্য আমিষের চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখে|
হৃদ্যন্ত্র
তেলযুক্ত
মাছ খেলে হৃদ্রোগের আশঙ্কা এক-তৃতীয়াংশ কমে আসে|
ক্যানসার
ক্যানসার, দীর্ঘমেয়াদি
প্রদাহজনিত রোগ যেমন: বাত, আর্থ্রাইটিস রোধে সাহায্য
করে, ত্বক ভালো রাখে|
পেশি ও হাড়
বিপাক
ক্রিয়া, দাঁত, পেশি ও হাড়ের গঠনে ভূমিকা রাখে। ছোট কাঁটাযুক্ত মাছ ক্যালসিয়ামের
একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস|
মেথি ফোড়নে চাপিলা
উপকরণ:
চাপিলা মাছ ২০০গ্রাম,
নুন স্বাদমতো,
সর্ষেরতেল পরিমাণমতো,
হলুদ প্রয়োজনমতো,
কাঁচালঙ্কা ৬টা,
জিরেগুঁড়ো ২চামচ,
মেথি ১চামচ।
প্রণালী:
মাছ ধুয়ে নুন,হলুদ মাখিয়ে
রাখুন।তারপর কড়াইতে তেল দিন।তেল গরম হলে মাছগুলো হালকা ভেজে তুলে রাখুন।কড়াইয়ে
আবার তেল দিন।তারপর মেথি ও কাঁচালঙ্কা ফোড়ন দিন।সামান্য জল দিন।এরপর নুন,হলুদ,জিরেগুঁড়ো
দিয়ে নেড়েচেড়ে ভাজা মাছগুলো দিয়ে দিন।সামান্য জল দিয়ে ঢেকে দিন।ফুটে উঠলে চেরা
কাঁচালঙ্কা দিয়ে নামিয়ে নিন।তারপর গরম গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন।
সর্ষে
বাটায় চাপিলা
যা লাগবে : চাপিলা মাছ ২৫০ গ্রাম, সরিষা
বাটা ২ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, পেঁয়াজ বাটা ১
টেবিল চামচ, ধনে, জিরা, হলুদ
ও মরিচ গুঁড়া আধা চা চামচ করে, সরিষার তেল আধা কাপ, কাঁচামরিচ
ফালি ৫টি, লবণ ও পানি পরিমাণ মতো।
যেভাবে করবেন : মাছ কেটে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন।
কড়াইয়ে পেঁয়াজ কুচির সঙ্গে কাঁচামরিচ বাদে সব মশলা হাতে মেখে নিন। এবার মাছ দিয়ে আলতোভাবে
মেখে ১ কাপ পানি দিয়ে মাঝারি আঁচে রান্না করুন। পানি শুকিয়ে তেল উপরে উঠলে
কাঁচামরিচ দিয়ে ২/১ মিনিট রান্না করে নামিয়ে নিন।
চাপিলা
মাছ ও ডাটার ঝোল
উপকরণ:
• চাপিলা মাছ – ৪০০ গ্রাম (আস্ত)
• ডাটা – ১/২ কেজি (লম্বা করে কাটা)
• পিঁয়াজ বাটা – ৩টেবিল চামচ
• রসুন বাটা – ১/২ চা চামচ
• আদা বাটা – ১/৩ চা চামচ
• জিরা বাটা – ১/৩ চা চামচ
• হলুদ গুড়া – ১/৩ চা চামচ
• মরিচ গুড়া – ১ চা চামচ
• লবণ ও তেল পরিমাণ মত
পদ্ধতি:
• রান্নার পাত্রে মাছসহ সব উপকরণ এক সাথে মাখিয়ে নিন।
• এবার পরিমাণ মত পানি যোগ করুন।
• ঢেকে রান্না করুন।
• দু-একবার ডলক দিন।
• পছন্দ মাফিক ঝোল রেখে নামিয়ে নিন।
No comments:
Post a Comment