Friday, November 17, 2017

বেল (ফল)/ Aegle marmelos
বেল একটি পুষ্টিকর আর উপকারী ফল। কাচা পাকা দুটোই সমান উপকারী। কাচা বেল
ডায়রিয়া ও আমাশায় রোগে ধন্বন্তরী। পাকা বেলের শরবত সুস্বাদু। বেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, এ এবং ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও পটাসিয়ামের মত মূল্যবান পুষ্টি উপাদান। বেলকে বলা হয় শ্রীফল কারণ হিন্দুদের পুজা-অর্চনায় বেলের পাতা ও ফল ব্যবহার করা হয়। হিন্দুরা বেল কাঠও পবিত্র জ্ঞান করে বিধায় কখনো বেল কাঠ পুড়িয়ে রান্না করে না। ইংরেজিতে বেলকে ডাকা হয় Wood Apple কারণ এ ফলের খোসা কাঠের মত শক্ত। বাংলায় ফলটির ব্যাপক কদর দেখে ব্রিটিশরা নাম দিয়েছে Bengal quinceএর বৈজ্ঞানিক নাম: Aegle marmelos Correa (syn. Feronia pellucida Roth, Crataeva marmelos L)বেল রুটাসি (Rutaceae) অর্থাৎ লেবু পরিবারের সদস্য। এর সংস্কৃত নাম বিল্ব। বেলের জন্ম ভারতবর্ষে। বেল গাছ বড় ধরনের বৃক্ষ যার উচ্চতা প্রায় ১০-১৬ মিটার। শীতকালে সব
পাতা ঝরে যায়
, আবার বসন্তে নতুন পাতা আসে। পাতা ত্রিপত্র যুক্ত, সবুজ, ডিম্বাকার ; পত্রফলকের অগ্রভাগ সূঁচাল। ফুল হালকা সবুজ থেকে সাদা রঙের। বোঁটা ছোট, ৪-৫টি পাঁপড়ি থাকে, পুংকেশর অসংখ্য, গর্ভাশয় বিস্তৃত ও কেন্দ্রস্থল খোলা। ফুলে মিষ্টি গন্ধ আছে। ফল বড়, গোলাকার, শক্ত খোসাবিশিষ্ট। ফলের ভিতরে শাঁস ৮-১৫টি কোয়া বা খন্ডে বিভক্ত থাকে,। প্রতিটি ভাগে বা খন্ডে চটচটে আঠার সাথে অনেক বীজ লেগে থাকে। কাচা ফলের রঙ সবুজ, পাকলে হলদে হয়ে যায়। ভিতরের শাঁসের রঙ হয়ে যায় কমলা। বা হলুদ। পাকা বেলে থেকে সুগন্ধ বের হয়। পাকা বেল গাছ থেকে ঝরে পড়ে। গাছ যখন ছোট থাকে তখন তাতে অনেক শক্ত ও তীক্ষ্ণ কাঁটা থাকে। গাছ বড় হলে কাঁটা কমে যায। খাদ্য হিসাবে বেল অনেকে মনে করেন প্রতিদিন একটি করে বেল পাতা ঘি দিয়ে ভেজে চিনি সহ খেলে স্মৃতিশক্তির উন্নতি ঘটে। ত্রিফলক যুগ্মপত্র। হিন্দুদের শিবপূজায় ত্রিনয়নের প্রতীক হিসাবে বিল্বপত্র ব্যবহার হয়।
১০০ গ্রাম বেলের শাঁসে থাকে: পানি 54.96-61.5 গ্রাম, প্রোটিন 1.8-2.62 গ্রাম ; স্নেহপদার্থ 0.2-গ্রাম ; শর্করা 28.11-31.8 গ্রাম ; ক্যারোটিন 55 মিলিগ্রাম ; থায়ামিন 0.13 মিলিগ্রাম ; রিবোফ্ল্যাবিন ১.১৯ মিলিগ্রাম ;নিয়াসিন ১.১ মিলিগ্রাম ; এসকর্বিক এসিড ৮ - ৬০ মিলিগ্রাম ; এবং টারটারিক এসিড ২.১১ মিলিগ্রাম।
0.39
বেল কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে ও আমাশয়ে উপকার করে। আধাপাকা সিদ্ধ ফল আমাশয়ে অধিক কার্যকরী। বেলের শরবত হজমশক্তি বাড়ায় এবং তা বলবর্ধক। বেলের পাতার রস মধুর সাথে মিশিয়ে পান করলে চোখের ছানি ও জ্বালা উপশম হয়। পাতার রস, মধু ও গোল মরিচের গুঁড়া মিশিয়ে পান করলে জন্ডিস রোগ নিরাময় হয়।পেট খারাপ, আমাশয়, শিশুর স্মরণ শক্তি বারানোর জন্য বেল উপকারী। বেলে প্রচুর ভিটামিন সি আছে। এই ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। বেল নিয়মিত খেলে কোলন ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা অনেকাংশে কমে যায়।
Bael এর পুষ্টির মূল্য 
বেলের পরিমাণ: 100 গ্রাম 
পরিপোষক পদার্থ পরিমাণ
প্রোটিন              1.8 গ্রাম শর্করা

 মোট কার্বোহাইড্রেট  31.8 গ্রাম
চর্বি
 মোট চর্বি   0.3 গ্রাম
ভিটামিন
Riboflavin    1.19 মিলিগ্রাম
নিয়াসিন  1.1 মিলিগ্রাম
Thiamin    0.13 মিলিগ্রাম
ভিটামিন এ    55 মিলিগ্রাম
ভিটামিন সি  8 থেকে 60 মিলিগ্রাম
খনিজ পদার্থ
 ক্যালসিয়াম     85 মিলিগ্রাম
Phosphorus    50 মিলিগ্রাম
পটাসিয়াম   600 মিলিগ্রাম
বেলের যত উপকারিতা
এই গরমে ঠাণ্ডা একগ্লাস বেলের শরবত হলে নিমিষেই যেন প্রাণ জুড়িয়ে যায়। বেলের নানান গুণাগুণের জন্য আমরা বেল খেয়ে থাকি। কারণ বেলে আছে নানান ঔষুধী
গুণাবলী যা, আমাদের দেহের অনেক উপকার করে থাকে। বেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, , ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও পটাসিয়াম।
কচি বেল টুকরা করে কেটে রোদে শুকিয়ে নিলে তাকে বেলশুট বলে। যাদের আলসার আছে, তারা বেলশুটের সঙ্গে পরিমাণমতো বার্লি মিশিয়ে রান্না করে নিয়মিত খেলে আলসার দ্রুত সেরে যায়। বেল পেট ঠাণ্ডা রাখে। গরমের সময় পরিশ্রমের পর বেলের শরবত খেলে ক্লান্তিভাব দূর হয়। বেলের ভিটামিন ‘এ’ চোখের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলোর পুষ্টি জোগায়। ফলে চোখের বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
বেল পেটের নানা অসুখ সারাতে দারুণ কার্যকর। দীর্ঘমেয়াদী আমাশয়-ডায়রিয়া রোগে
কাঁচা বেল নিয়মিত খেলে দ্রুত আরোগ্য লাভ করা সম্ভব। বেলের শাঁস পিচ্ছিল বলে এই ফল পাকস্থলীতে উপকারী পরিবেশ সৃষ্টি করে, খাবার সঠিকভাবে হজম করতে সাহায্য করে। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।
বেলে থাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ, যা মুখের ব্রণ সারাতে সাহায্য করে। যাদের পাইলস আছে, তাদের জন্য নিয়মিত বেল খাওয়া উপকারী। এতে আছে ভিটামিন সি। ভিটামিন সি গ্রীষ্মকালীন বহু রোগবালাই দূরে রাখে।
জন্ডিসের সময় পাকা বেল গোলমরিচের সঙ্গে শরবত করে খেলে উপকার পাওয়া যায়। শিশুদের কানের ব্যথা ও ইনফেকশন সারাতে বেলপাতার জুড়ি নেই। বেলপাতা ও তিলের তেল জ্বাল দিয়ে ওই তেল ড্রপার দিয়ে কানে দিলে ব্যথা সেরে যায়। নিয়মিত বেল খেলে কোলন ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা কমে। সর্দি হলে বেলপাতার রস এক চামচ খেলে সর্দি ও জ্বরভাব কেটে যায়।
বহুমুখী উপকারিতা -
বেলের হাজার গুন ,এর উপকারিতা বলে শেষ করা মুশকিল। বেলের কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপকারের কথা তুলে ধরা হল-
বেল পেটের নানা অসুখ সারাতে দারুন উপকারি। দীর্ঘমেয়াদি আমাশয়-ডায়রিয়া রোগে কাঁচা বেল নিয়মিত খেলে দ্রুত আরোগ্য লাভ করা সম্ভব ।
বেল পেট ঠাণ্ডা রাখে। গরমের সময় পরিশ্রম করার পর বেলের সরবত খেলে ক্লান্তি ভাব দূর হয় ।
বেলের ভিটামিন "এ" চোখের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলোর পুষ্টি যোগায়। ফলে চোখের বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
বেলের শাঁস পিচ্ছিল ধরনের। এমন হওয়ার কারনে এই ফল পাকস্থলীতে উপকারী পরিবেশ সৃষ্টি করে,খাবার সঠিক ভাবে হজম করতে সাহায্য করে। ফলে কোষ্ট কাঠিন্য দূর হয় ।
বেলে থাকে প্রচুর পরিমানে ফাইবার বা আঁশ, যা মুখের ব্রণ সারাতে সাহায্য করে। যাদের পাইলস আছে, তাদের জন্য নিয়মিত বেল খাওয়া উপকারী।
বেলে আছে ভিটামিন সি । ভিটামিন সি গ্রীষ্মকালীন বহু রোগ বালাইকে দূরে রাখে।
জন্ডিসের সময় পাকা বেল গোল মরিচের সাথে শরবত করে খেলে উপকার পাওয়া যায় ।
শিশুদের কানের ব্যাথা ও ইনফেকশন সারাতে বেল পাতার জুড়ি নেই। বেল পাতা ও তিলের তেল জ্বাল দিয়ে ওই তেল ড্রপার দিয়ে কানে দিলে ব্যাথা সেরে যায় ।
নিয়মিত বেল খেলে কোলন ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা কমে যায় ।
সর্দি হলে বেল পাতার রস ১ চামচ খেলে সর্দি আর জ্বর ভাব কেটে যায় ।
কচি বেল টুকরা করে কেটে রোদে শুকিয়ে নিলে তাকে বেলশুট বলে। যাদের আলসার আছে তারা বেলশুটের সাথে পরিমান মতো বার্লি মিশিয়ে রান্না করে নিয়মিত খেলে আলসার দ্রুত সেরে যায়।
বেলের শরবত
উপকরণ -

১টি বেল
হাফ কাপ দুধ
জল পরিমাণ মতো
চিনি পরিমাণ মতো
বরফের টুকরো
পদ্ধতি -
বেল ভেঙে ভেতর থেকে শাঁস বের করে নিন।
এবার একটি পাত্রে জল নিয়ে তাতে শাঁসটি ভিজিয়ে রাখুন ঘণ্টাখানেক।
ঘণ্টাখানেক পর শাঁস থেকে বেলের আঠা ও বিচি ফেলে দিন।
এবার বেলের বাকি অংশটা ভালোভাবে চটকে ছেঁকে নিয়ে গ্লাসে ঢালুন।
এবার গ্লাসে জল ও চিনি দিন।
সমস্ত উপকরণগুলো ভালোভাবে মিশিয়ে দিন।
কেক টুকরো বরফ দিয়ে ঠান্ডা ঠান্ডা বেলের শরবত পরিবেশন করুন।
দই দিয়ে বেলের শরবত
উপকরণঃ
বেল – ছোট চারটি বা বড় দুইটি
মিষ্টি দই – আধা কাপ বা স্বাদমতো
চিনি বা গুড় – স্বাদমতো
পানি – ২ গ্লাস
তরল দুধ – ১ থেকে ২ কাপ (পাতলা বা ঘন কী রকম খাবেন তার উপর দুধ নির্ভর করে)
লবণ – এক চিমটি (ইচ্ছা, আমি ব্যবহার করিনি)
প্রণালীঃ
বেল ভেঙে ভেতর থেকে ক্বাথ কুড়িয়ে একটি গামলায় ঢেলে দুই গ্লাস পানি দিয়ে আধা ঘন্টা ভিজিয়ে রাখুন।
এবার হাত দিয়ে ভালোভাবে চটকে নিয়ে যতদূর সম্ভব হাত দিয়েই আঁশ উঠিয়ে ফেলে দিন।
এরপর বড় চালনিতে ঢেলে ডলে ডলে আঁশ ছাড়িয়ে ক্বাথ বের করতে হবে।
এবার একটি বড় বোলে বেলের ক্বাথ, দই, চিনি বা গুড়, দুধ, লবণ সব একসাথে মিশিয়ে ভালোভাবে ব্লেন্ড করুন।

দুধ আপনার শরবতের ঘনত্ব অনুযায়ী কম বা বেশি করতে পারেন।

No comments:

Post a Comment