Wednesday, October 14, 2015

তুলসী পাতা
ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে তুলসীকে সীতাস্বরূপা ,স্কন্দপুরাণে লক্ষীস্বরূপা,চর্কসংহিতায় বিষ্ণুর ন্যায় ভুমি,পরিবেশ ও আমাদের রক্ষাকারী বলে বিষ্ণুপ্রিয়া ,ঋকবেদে কল্যাণী বলা হয়েছে । স্বয়ং ভগবান বিষ্ণু তুলসী দেবীকে পবিত্রা বৃন্দা বলে আখ্যায়িত করে এর সেবা করতে বলেছেন।
তুলসী পাতার কিছু গুনাগুন নিয়ে আজ এই পোস্ট।
জ্বর হলে জলের মধ্যে তুলসী পাতা, গোল মরিচ এবং মিশ্রী মিশিয়ে ভাল করে সেদ্ধ করুন৷ অথবা তিনটে দ্রব্য মিশিয়ে বড়ি তৈরি করুন৷ দিনের মধ্যে তিন-চার বার ঐ বড়িটা জলের সঙ্গে খান৷ জ্বর খুব তাড়াতাড়ি সেরে যাবে৷
* কাশি যদি না কমে সেই ক্ষেত্রে তুলসী পাতা এবং আদা পিষে মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খান৷ এতে উপকার পাবেন৷
* মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে দিনে 4-5 বার তুলসী পাতা চেবান৷
* ঘা যদি দ্রুত কমাতে চান তাহলে তুলসী পাতা এবং ফিটকিরি একসঙ্গে পিষে ঘা এর স্থানে লাগান কমে যাবে৷
* শরীরের কোন অংশ যদি পুড়ে যায় তাহলে তুলসীর রস এবং নারকেলের তেল ফেটিয়ে লাগান এতে জ্বালা কমবে৷ পোড়া জায়গাটা তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যাবে৷ সেখানে কোন দাগ থাকবে না৷
* ত্বকের চমক বাড়ানোর জন্য এছাড়া ত্বকের বলীরেখা এবং ব্রোনো দূর করার জন্য তুলসী পাতা পিষে মুখে লাগান৷
* বুদ্ধি এবং স্মরণ শক্তি বাড়ানোর জন্য প্রতিদিন 5-7 টা তুলসী পাতা চিবান৷
তুলসী পাতা
তুলসী গাছ আমাদের আশেপাশেই থাকে অনেক সময় কিন্তু, আমরা তার সদ্ব্যবহার করতে পারি না। শুধু পুজো-অর্চনাতেই তুলসী পাতার প্রয়োজন পড়েনা ৷ আয়ুর্বেদে তুলসীকে ভেষজের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে ৷
নাম:
বাংলা : তুলসী
অন্যান্য ভাষায় : Holy basil, Tulsi
तुलसी (Hindi, Tamil, Telugu), Trittavu (Malayalam), Tulshi (Marathi)
বৈজ্ঞানিক নাম: Ocimum sanctum
গোত্র: Lamiaceae

পরিচয়:
সাধারনত ভেজা মাটিতে তুলসী গাছের জন্ম হয়ে থাকে তুলসী শাখা প্রধান গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। গাছটির সমস্ত শরীরে একধরণের সুক্ষ্মতা বিদ্যমান পূর্ণাঙ্গ উদ্ভিদ ৭৫-৯০ সে.মি. হয়। শাখা-প্রশাখা শক্ত ও চতুষ্কোনাকার। তুলসী ঔষধি ও চিরহরিৎ গুল্মজাতীয় গাছ। পাতা ২ থেকে ৪ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। তবে এর পাতার কিনারা খাঁজকাটা। শাখা-প্রশাখার সামনের অংশ থেকে পাঁচটি ফুলের ডাল বের হয় এবং প্রতিটি ডালের চারদিকে ছাতার মতো ১০ থেকে ১২টি স্তরে থরেথরে ফুল ধরে। তুলসী গাছের ফুল, ফল এবং পাতার একটি ঝাঁজালো গন্ধ আছে। বাংলাদেশ ও ভারতের সর্বত্র এ গাছ দেখতে পাওয়া যায়। এ গাছের গুণাগুণের কথা বিভিন্ন প্রাচীন গ্রন্থেও উল্লেখ আছে।
উপকারিতা :
নানা রোগে এ গাছের রসের ব্যবহার সেই প্রাচীনকাল থেকে। গাছটি কৃমিনাশক, বায়ুনাশক, হজমকারক ও রুচিবর্ধক হিসেবে বহুল ব্যবহৃত।
১. চর্মরোগে তুলসী পাতা দূর্বাঘাসের ডগার সংগে বেটে মাখলে ভালো হয়ে যায়।
২. জ্বর হলে পানির মধ্যে তুলসী পাতা, গোল মরিচ এবং মিশ্রী মিশিয়ে ভাল করে সেদ্ধ করে নিন ৷ অথবা উপরিউক্ত তিনটে দ্রব্য মিশিয়ে বড়ি তৈরি করুন ৷ দিনের মধ্যে তিন-চার বার ঐ বড়িটা পানি দিয়ে সেবন করুণ
জ্বর খুব তাড়াতাড়ি সেরে যাবে।
৩. কাশি হলে তুলসী পাতা এবং আদা একসাথে পিষে মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খান ৷ এতে উপকার পাবেন ৷
৪. ডাইরিয়া হলে ১০ থেকে বারোটি পাতা পিষে রস খেয়ে ফেলুন।
৫. মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে দিনে ৪-৫ বার তুলসী পাতা চেবান

৬. আপনার শরীরে যদি কোনরকম ঘা যদি থাকে তাহলে তাহলে তুলসী পাতা এবং ফিটকিরি একসঙ্গে পিষে ঘা এর স্থানে লাগান।

৭. শরীরের কোন অংশ যদি পুড়ে যায় তাহলে তুলসীর রস এবং নারকেলের তেল ফেটিয়ে লাগান, এতে জ্বালাপোড়া কমে যাবে। পোড়া জায়গাটা তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যাবে এবং পোড়া দাগ ওঠে যাবে।
৮. ত্বকের রোশনি বাড়ানোর জন্য, ত্বকের বলীরেখা এবং ব্রোন দূর করার জন্য তুলসী পাতা পিষে মুখে লাগান

৯. প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া দূর করতে হলে তুলসী পাতার রস ২৫০ গ্রাম দুধ এবং ১৫০ গ্রাম জলের মধ্যে মিশিয়ে পান করুন

১০. যদি কখনও বমি কিংবা মাথা ঘোরা শুরু করে, তাহলে তুলসী রসের মধ্যে গোলমরিচ মিশিয়ে খেলে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়।
১১. সকালবেলা খালি পেটে তুলসী পাতা চিবিয়ে রস পান করলে খাবার রুচী বাড়ে।
১২. নিয়মিত তুলসীর রস পানে হৃদরোগেও উপকার পাওয়া যায়।
১৩. চোখের সমস্যা দূর করতে রাতে কয়েকটি তুলসী পাতা পানিতে ভিজিয়ে রেখে ওই পানি দিয়ে সকালে চোখ ধুয়ে ফেলুন।

তুলসী গাছের পরিচিতি
তুলসী একটি ঔষধিগাছ। তুলসী অর্থ যার তুলনা নেই। সুগন্ধিযুক্ত, কটু তিক্তরস, রুচিকর। এটি সর্দি, কাশি, কৃমি ও বায়ুনাশক এবং মুত্রকর, হজমকারক ও এন্টিসেপটিক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তবে বিশেষ করে কফের প্রাধান্যে যে সব রোগ সৃষ্টি হয় সে ক্ষেত্রে তুলসী বেশ ফলদায়ক।
ব্যবহার
জ্বর হলে জলের মধ্যে তুলসী পাতা, গোল মরিচ এবং মিশ্রী মিশিয়ে ভাল করে সেদ্ধ করুন৷ অথবা তিনটে দ্রব্য মিশিয়ে বড়ি তৈরি করুন৷ দিনের মধ্যে তিন-চার বার ঐ বড়িটা জলের সঙ্গে খান৷ জ্বর খুব তাড়াতাড়ি সেরে যাবে৷
কাশি যদি না কমে সেই ক্ষেত্রে তুলসী পাতা এবং আদা পিষে মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খান৷ এতে উপকার পাবেন৷
পেট খারাপ হলে তুলসীর 10 টা পাতা সামান্য জিরের সঙ্গে পিষে 3-4 বার খান৷ পায়খানা একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে৷
মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে দিনে 4-5 বার তুলসী পাতা চেবান৷
ঘা যদি দ্রুত কমাতে চান তাহলে তুলসী পাতা এবং ফিটকিরি একসঙ্গে পিষে ঘা এর স্থানে লাগান কমে যাবে৷
শরীরের কোন অংশ যদি পুড়ে যায় তাহলে তুলসীর রস এবং নারকেলের তেল ফেটিয়ে লাগান এতে জ্বালা কমবে৷ পোড়া জায়গাটা তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যাবে৷ সেখানে কোন দাগ থাকবে না৷
ত্বকের চমক বাড়ানোর জন্য এছাড়া ত্বকের বলীরেখা এবং ব্রোনো দূর করার জন্য তুলসী পাতা পিষে মুখে লাগান৷
বুদ্ধি এবং স্মরণ শক্তি বাড়ানোর জন্য প্রতিদিন 5-7 টা তুলসী পাতা চিবান৷
প্রস্রাবে জ্বালা হলে তুলসী পাতার রস 250 গ্রাম দুধ এবং 150 গ্রাম জলের মধ্যে মিশিয়ে পান করুন৷ উপকার পাবেন৷
ত্বকের সমস্যা দূর করতে তিল তেলের মধ্যে তুলসী পাতা ফেলে হালকা গরম করে ত্বকে লাগান৷
অনেক সময় আমাদের হাতে ও পায়ে কালো কালো ছোপ পড়ে। এইসব দাগ থেকে রেহাই পেতে তুলশী পাতার জুড়ি
নেই। তুলশী পাতার রসের সাথে দুধ,ময়দা, কাঁচা হলুদ বাটা ও জাফরান একসাথে মিশিয়ে হাত ও পায়ের কালো দাগের উপর লাগান। শুকিয়ে গেলে হালকা করে ঘষে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। কিছুদিন এইভাবে ব্যবহার করলে হাত ও পায়ের কালো ছোপ কমে যাবে।
একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর আমাদের সবার মুখের চামড়া কুঁচকে যেতে থাকে। তুলশী পাতার রস ও নারকেলের পানি সমপরিমানে মিশিয়ে মুখে ও শরীরে লাগাতে পারেন নিয়মিত। এতে করে চামড়া টান টান থাকবে।
তুলসী মূল শুক্র গাঢ়কারক এবং বাজীকারক। তুলসী পাতার ক্বাথ, এলাচ গুঁড়া এবং এক তোলা পরিমাণ মিছরী পান করলে ধাতুপুষ্টি সাধিত হয় যতদিন সম্ভব খাওয়া যায়। এটি অত্যন্ত ইন্দ্রিয় উত্তেজক। প্রতিদিন এক ইঞ্চি পরিমাণ তুলসী গাছের শিকড় পানের সাথে খেলে যৌনদূর্বলতা রোগ সেরে যায়।
কোন কারনে রক্ত দূষিত হলে কাল তুলসিপাতার রস কিছুদিন খেলে উপকার পাওয়া যায়।শ্লেষ্মার জন্য নাক বন্ধ হয়ে কোনো গন্ধ পাওয়া না গেলে সে সময় শুষ্ক পাতা চূর্ণের নস্যি নিলে সেরে যায়। পাতাচূর্ণ দুই আঙ্গুলের চিমটি দিয়ে ধরে নাক দিয়ে টানতে হয়, সেটাই নস্যি। তুলসী পাতা দিয়ে চায়ের মত করে খেলে দীর্ঘদিন সুস্থ থাকা যায়। তুলসী চা হিসাবে এটি বেশ জনপ্রিয়।
শুধু পুজো-অর্চনাতেই লাগে না ৷ তুলসী পাতার অনেক গুণ রয়েছে ৷ আয়ুর্বেদে তুলসীকে ভেষজের আখ্যা দেওয়া হয় ৷ চলুন এই ভেষজের গুণগুলো জেনে নিই ৷
* জ্বর হলে জলের মধ্যে তুলসী পাতা, গোল মরিচ এবং মিশ্রী মিশিয়ে ভাল করে সেদ্ধ করুন ৷ অথবা তিনটে দ্রব্য মিশিয়ে বড়ি তৈরি করুন ৷ দিনের মধ্যে তিন-চার বার ঐ বড়িটা জলের সঙ্গে খান ৷ জ্বর খুব তাড়াতাড়ি সেরে যাবে।
* কাশি যদি না কমে সেই ক্ষেত্রে তুলসী পাতা এবং আদা পিষে মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খান ৷ এতে উপকার পাবেন ৷
* পেট খারাপ হলে তুলসীর ১০ টা পাতা সামান্য জিরের সঙ্গে পিষে ৩-৪ বার খান ৷ পায়খানা একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে, মানে পায়খানার ওই সমস্যাটা আর কি!
* মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে দিনে ৪-৫ বার তুলসী পাতা চেবান ৷
* ঘা যদি দ্রুত কমাতে চান তাহলে তুলসী পাতা এবং ফিটকিরি একসঙ্গে পিষে ঘা এর স্থানে লাগান, কমে যাবে ৷
* শরীরের কোন অংশ যদি পুড়ে যায় তাহলে তুলসীর রস এবং নারকেলের তেল ফেটিয়ে লাগান, এতে জ্বালা কমবে ৷ পোড়া জায়গাটা তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যাবে ৷ সেখানে কোন দাগ থাকবে না ৷
* ত্বকের চমক বাড়ানোর জন্য, এছাড়াও ত্বকের বলীরেখা এবং ব্রোন দূর করার জন্য তুলসী পাতা পিষে মুখে লাগান ৷
* বুদ্ধি এবং স্মরণশক্তি বাড়ানোর জন্য প্রতিদিন ৫-৭ টা তুলসী পাতা চিবান ৷
* প্রস্রাবে জ্বালা হলে তুলসী পাতার রস ২৫০ গ্রাম দুধ এবং ১৫০ গ্রাম জলের মধ্যে মিশিয়ে পান করুন ৷ উপকার পাবেন ৷
* ত্বকের সমস্যা দূর করতে তিল তেলের মধ্যে তুলসী পাতা ফেলে হালকা গরম করে ত্বকে লাগান ৷

তুলসী পাতার ঔষধি ব্যবহার
তুলসীর উপকারিতার কথা কে না জানে। সর্দি, কাশি, ঠাণ্ডাজনিত সকল রোগের ঔষধ এই তুলসী। তুলসীর বৈজ্ঞানিক নাম ওসিমাম স্যাঙ্কটাম। অন্য নাম হলি বাসিল, বিশেষত হিন্দু সম্প্রদায় গাছটিকে এ নামে ডেকে থাকে। তাদের কাছে গাছটি ধর্মীয় উপাসনার অনুষঙ্গ। হিন্দু পরিবারগুলো তাদের ঘরের সামনে ফুলের টবে এ গাছটির রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে। তাদের প্রার্থনার সময় তুলসীপাতা ব্যবহৃত হয় দেবতার উদ্দেশে। প্রসাদ হিসেবেও তারা তুলসীপাতা ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু তাই বলে এটা হিন্দুদের গাছ এমন মনে করার কোনো কারণ নেই। সব ধরনের মানুষের কাছেই এর গ্রহণযোগ্যতা অনেক।
এই তুলসীর আছে নানান রকম ঔষধি ব্যবহার। নানান রকম রোগ বালাইয়ের ঘরোয়া চিকিৎসায় ব্যবহার করা সম্ভব এই তুলসী। বর্ণনা করার চেষ্টা করা হলো এমনই কয়েকটি গুনাগুণ।
তুলসীপাতা স্নায়ুটনিক এবং স্মৃতিবর্ধক হিসেবে পরিচিত। ফুসফুসের শ্লেষ্মা নিঃসরণে তুলসীপাতার রস অতুলনীয়। পাকস্থলীর শক্তি বর্ধনেও তা অনন্য।
তুলসীর বীজ গায়ের চামড়াকে মসৃণ রাখে। বীজ সেবনে প্রস্রাবের মাত্রা বেড়ে থাকে।
বিভিন্ন প্রকার জ্বরে তুলসীপাতার রসের ব্যবহার অনেকটা শাস্ত্রীয় বিষয় হিসেবে পরিচিত। বিশেষত ঋতু পরিবর্তন হেতু
যে জ্বর, ম্যালেরিয়া জ্বর এবং ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসায় এর ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে সমাজে। এর জন্য কচি তুলসীপাতা চায়ের সাথে সেদ্ধ করে পান করলে ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধ হয়ে থাকে।
একিউট জ্বরে তুলসীপাতার সেদ্ধ রসের সাথে এলাচিগুঁড়া এবং চিনি ও দুধ মিশিয়ে পান করলে দ্রুত উপকার পাওয়া যায়। গলক্ষতের জন্য তুলসীপাতা সেদ্ধ পানি পান করলে এবং গারগল করলে ভালো উপকার পাওয়া যায়।
তুলসী পাতার ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে ফুসফুসীয় সমস্যায়। ব্রঙ্কাইটিস, অ্যাজমা, ইনফ্লুয়েঞ্জা, কাশি এবং ঠাণ্ডাজনিত রোগে তুলসী পাতার রস, মধু ও আদা মিশিয়ে পান করলে উপশম পাওয়া যায়। ইনফ্লুয়েঞ্জা হলে তুলসী পাতার রস, লবণ ও লবঙ্গ মিশিয়ে পান করলে ফল পাওয়া যায়। এ ধরনের রোগের ব্যবহারের জন্য তুলসী পাতা আধা লিটার পানিতে সেদ্ধ করতে হয় ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষন তা অর্ধেকে পরিণত হয়।
কিডনির পাথরে তুলসীর ব্যবহার চমকপ্রদ ফলাফল দিয়ে থাকে। তুলসীপাতার রস মধুর সাথে মিশিয়ে নিয়মিত একাধারে ছয় মাস পর্যন্ত ব্যবহারে কিডনির পাথর অপসারিত হয়ে থাকে। এ ছাড়া তুলসী কিডনিকে শক্তিশালী করে থাকে। হৃদরোগেও তুলসীর ব্যবহার রয়েছে। কোলেস্টেরল বৃদ্ধিজনিত হৃদরোগে তুলসীপাতার রস খুব উপকারী। এমনকি কোলেস্টেরলের মাত্রাও কমিয়ে দেয় তুলসী। ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তের শর্করার মাত্রাও কমিয়ে দেয় তুলসীর রস।
তুলসীপাতার রস শিশুদের জন্য বেশ উপকারী। বিশেষত শিশুদের ঠাণ্ডা লাগা, জ্বর হওয়া, কাশি লাগা, ডায়রিয়া ও বমির জন্য তুলসীপাতার রস ভালো কাজ করে। জলবসন্তের পুঁজ শুকাতেও তুলসীপাতা ব্যবহৃত হয়।
মানসিক চাপে অ্যান্টিস্ট্রেস এজেন্ট হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, মানসিক অবসাদ প্রশমনে এমনকি প্রতিরোধে তুলসী চমৎকার কাজ করে। কোনো সুস্থ ব্যক্তি যদি প্রতিদিন অন্তত ১২টি তুলসীপাতা দিনে দুবার নিয়মিত চিবাতে পারেন তাহলে সেই ব্যক্তি কখনো মানসিক অবসাদে আক্রান্ত হবেন না বলে গবেষকরা জানিয়েছেন।
মুখের ঘা শুকাতেও তুলসীপাতা ভালো কাজ করে। মুখের ইনফেকশন দূর করতে তুলসীপাতা অতুলনীয়। প্রতিদিন কিছু পাতা (দিনে দুবার) নিয়মিত চিবালে মুখের সংক্রমণ রোধ করা যেতে পারে। চর্মরোগে তুলসীপাতার রস উপকারী। দাউদ এবং অন্যান্য চুলকানিতে তুলসীপাতার রস মালিশ করলে ফল পাওয়া যায়। ন্যাচার অ্যাথিতে শ্বেতীরোগের চিকিৎসায় তুলসীপাতার ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে।
চোখের ক্ষতে এবং রাতকানা রোগে নিয়মিত তুলসীপাতার রস ড্রপ হিসেবে ব্যবহারে ফল পাওয়া যায়। দাঁতের সুরক্ষায় তুলসীপাতা শুকিয়ে গুঁড়া করে দাঁত মাজলে দাঁত ভালো থাকে। এ ছাড়া সরিষার তেলের সাথে তুলসীপাতার গুঁড়া মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে দাঁত মাজলেও দাঁত শক্ত থাকে। মুখের দুর্গন্ধ রোধে তুলসীপাতার মাজন ভালো ফল দিয়ে থাকে।
মাথাব্যথায় তুলসীপাতার পেস্ট কপালে ব্যবহার করলে ফল পাওয়া যায়। এ ছাড়া গনোরিয়া ও গাউট রোগেও তুলসীপাতার রস উপকারী। তুলসীপাতার ব্যবহার ছাড়া তুলসী বীজও ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ডায়রিয়া, পুরনো আমাশয়, কোষ্ঠবদ্ধতা, পাইলস, গনোরিয়া কাশি, কিডনি সমস্যা এবং জ্বরে তুলসী বীজ উপকারী।
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় তুলসী থেকে তৈরি ওষুধটির নাম ওসিমাস স্যাঙ্কটাম, অ্যাজমা, ঠাণ্ডা লাগা, কাশি হওয়া, জ্বর প্রভৃতিতে এর প্রধান ব্যবহার, মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত এবং স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়ায় এর চমৎকার ব্যবহার রয়েছে। গলাব্যথা, বুকে ব্যথা, মাথাব্যথা, চোখ ব্যথা, কান ব্যথার লক্ষণেও এটা ব্যবহৃত হয়ে থাকে। মুখের ক্ষত, মুখের দুর্গন্ধ, পেট ফাঁপা, ক্ষুধামান্দ্য, লিভারে ব্যথা প্রভৃতিতে এর ব্যবহার রয়েছে।
ইনফ্লুয়েঞ্জার জন্য হোমিওপ্যাথিতে এর ব্যবহার রয়েছে। টাইফয়েড জ্বরেও এর নিয়মিত ব্যবহার রয়েছে। হোমিওপ্যাথিতে ডায়রিয়া, আমাশয়, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া এবং বারবার প্রস্রাবের চিকিৎসায়ও এটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
তুলসী গাছ ও পাতার গুনাগুণ 
বাংলায় তুলসি অন্যান্য নাম: Holy basil, Tulsi तुलसी (হিন্দি, তামিল, তেলেগু), Trittavu (মালয়ম), Tulshi (মারাঠী) বৈজ্ঞানিক নামঃ Ocimum tenuiflorum L. - holy basil ইংরেজি নামঃ Sacred Basil, Holy Basil.
পরিচিতিঃ সাধারনত ভেজা মাটিতে তুলসী গাছের জন্ম হয়ে থাকে
তুলসী শাখা প্রধান গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। গাছটির সমস্ত শরীরে একধরণের সুক্ষ্মতা বিদ্যমান পূর্ণাঙ্গ উদ্ভিদ ৭৫-৯০ সে.মি. হয়। শাখা-প্রশাখা শক্ত ও চতুষ্কোনাকার। তুলসী ঔষধি ও চিরহরিৎ গুল্মজাতীয় গাছ। পাতা ২ থেকে ৪ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। তবে এর পাতার কিনারা খাঁজকাটা। শাখা-প্রশাখার সামনের অংশ থেকে পাঁচটি ফুলের ডাল বের হয় এবং প্রতিটি ডালের চারদিকে ছাতার মতো ১০ থেকে ১২টি স্তরে থরেথরে ফুল ধরে। তুলসী ফুল ছোট পার্পেল বা হালকা লালচে বঙের হয়, সিলিন্ডারাকৃতির স্পাইকে ফুল গুলো ঘন হয়ে জন্মে থাকে। ফল গুলো ও ছোট, বীজ হলুদ বা একটু লালচে ধরনের। তুলসী গাছের ফুল, ফল এবং পাতার একটি ঝাঁজালো গন্ধ আছে। বাংলাদেশ ও ভারতের সর্বত্র এ গাছ দেখতে পাওয়া যায়। এ গাছের গুণাগুণের কথা বিভিন্ন প্রাচীন গ্রন্থেও উল্লেখ আছে।
ধর্মীয় কারণঃ ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে তুলসীকে সীতাস্বরূপা, স্কন্দপুরাণে লক্ষীস্বরূপা, চর্কসংহিতায় বিষ্ণুর ন্যায় ভুমি, পরিবেশ ও আমাদের রক্ষাকারী বলে বিষ্ণুপ্রিয়া, ঋকবেদে কল্যাণী বলা হয়েছে
স্বয়ং ভগবান বিষ্ণু তুলসী দেবীকে পবিত্রা বৃন্দা বলে আখ্যায়িত করে এর সেবা করতে বলেছেন। পরিবেশগত কারণঃ পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে তুলসীগাছ একমাত্র উদ্ভিদ যা দিন রাত চব্বিশ ঘণ্টা অক্সিজেন সরবরাহ করে বায়ু বিশুদ্ধ রাখে যেখানে অন্য যেকোন গাছ রাত্রিতে কার্বন ডাই অক্সাইড ত্যাগ করে তাই রাতের বেলাতে তুলসীতলায় শয়ন করাও ব্যক্তির জন্য উপকারী।এছাড়া তুলসীগাছ ভুমি ক্ষয়রোধক এবং তুলসী গাছ লাগালে তা মশা কীটপতঙ্গ ও সাপ থেকে দূরে রাখে।
তুলসীর স্বাস্থ্যগুণ:

» চর্মরোগে তুলসী পাতা দূর্বাঘাসের ডগার সংগে বেটে মাখলে ভালো হয়ে যায়।
» উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল কমিয়ে হূৎপিণ্ডের রক্ত সরবরাহের মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে। লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।
» হাড়ের গাঁথুনিতে ব্যথা দূর করে এবং শরীরের কাটাছেঁড়া দ্রুত শুকাতে অবদান রাখে।
» ঠাণ্ডা মরসুমে ছোট বাচ্চাদের তুলসির পাতা খাওয়ালে কৃমি দূর হবে এবং মাংসপেশি ও হাড় হবে শক্তিশালী।
» জ্বর হলে পানির মধ্যে তুলসী পাতা, গোল মরিচ এবং মিশ্রী মিশিয়ে ভাল করে সেদ্ধ করে নিন ৷ অথবা উপরিউক্ত তিনটে দ্রব্য মিশিয়ে বড়ি তৈরি করুন ৷ দিনের মধ্যে তিন-চার বার ঐ বড়িটা পানি দিয়ে সেবন করুণ জ্বর খুব তাড়াতাড়ি সেরে যাবে।

» কাশি হলে তুলসী পাতা এবং আদা একসাথে পিষে মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খান ৷ এতে উপকার পাবেন ৷
» ডাইরিয়া হলে ১০ থেকে বারোটি পাতা পিষে রস খেয়ে ফেলুন।
» মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে দিনে ৪-৫ বার তুলসী পাতা চেবান
» আপনার শরীরে যদি কোনরকম ঘা যদি থাকে তাহলে তাহলে তুলসী পাতা এবং ফিটকিরি একসঙ্গে পিষে ঘা এর স্থানে লাগান।
» শরীরের কোন অংশ যদি পুড়ে যায় তাহলে তুলসীর রস এবং নারকেলের তেল ফেটিয়ে লাগান, এতে জ্বালাপোড়া কমে যাবে। পোড়া জায়গাটা তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যাবে এবং পোড়া দাগ ওঠে যাবে।
» ত্বকের রোশনি বাড়ানোর জন্য, ত্বকের বলীরেখা এবং ব্রোন দূর করার জন্য তুলসী পাতা পিষে মুখে লাগান।
» প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া দূর করতে হলে তুলসী পাতার রস ২৫০ গ্রাম দুধ এবং ১৫০ গ্রাম জলের মধ্যে মিশিয়ে পান করুন তুলসি গাছের বীজও যথেষ্ট উপকারী। এর বীজ শুকিয়ে মিহি করে খেলে প্রস্রাবের ইনফেকশনজনিত সমস্যা ভালো হয়। পুরুষত্বহীনতা দূরীকরণে এই পাতার অবদান অপরিহার্য।
» যদি কখনও বমি কিংবা মাথা ঘোরা শুরু করে, তাহলে তুলসী রসের মধ্যে গোলমরিচ মিশিয়ে খেলে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়।
» সকালবেলা খালি পেটে তুলসী পাতা চিবিয়ে রস পান করলে খাবার রুচী বাড়ে।
» নিয়মিত তুলসীর রস পানে হৃদরোগেও উপকার পাওয়া যায়।

» চোখের সমস্যা দূর করতে রাতে কয়েকটি তুলসী পাতা পানিতে ভিজিয়ে রেখে ওই পানি দিয়ে সকালে চোখ ধুয়ে ফেলুন।
» তুলসীতে Eugenol অধিক পরিমাণে থাকায় তা Cox-2 Inhibitor রূপে কাজ করে বলে তা ব্যথানাশক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
» Hypoglycemic drugs এর সাথে তুলসী খেলে তা টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগে দ্রুত গ্লুকোজের মাত্রা কমিয়ে দেয়।
» তেজস্ক্রিয়তার ফলে ক্ষতিগ্রস্থ কোষসমুহকে মেরামত করে।
» চর্বিজনিত হৃদরোগে এন্টি অক্সিডেন্টের ভুমিকা পালন করে।
» তুলসী একশেরও বেশি Phytochemicals (যেমন oleanolic acid, beta caryophyllene ইত্যাদি)বহন করে বলে ক্যান্সার চিকিত্সারয় ব্যবহৃত হয়।
» তুলসীর অ্যালকোহলিক নির্যাস Immune system এর রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে।
» তুলসী স্নায়ুটনিক ও স্মৃতিবর্ধক।
» শ্বসনতন্ত্রের বিভিন্নরোগ যেমন ব্রঙ্কাইটিস, ইনফ্লুয়েঞ্জা, হাঁপানি প্রভৃতি রোগের নিরাময়ক।
» সর্দি, কাশি, জ্বর, বমি, ডায়ারিয়া, কলেরা, কিডনির পাথর, মুখের আলসারসহ চোখের বিভিন্ন রোগে ইহা ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
» দাঁতের রোগে উপশমকারী বলে টুথপেস্ট তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।


No comments:

Post a Comment