কচুর লতি
কচুর লতিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’, যা সংক্রামক রোগ থেকে মানব শরীরকে রক্ষা করে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ মতাকে করে দ্বিগুণ শক্তিশালী।
ভিটামিন ‘সি’ চর্মরোগের বিরুদ্ধে কাজ করে। ওজন কমানোর জন্য কচুর
লতি খাওয়া ভালো। খাবার হজমের পর বর্জ্য দেহ থেকে সঠিকভাবে বের হতে সাহায্য করে কচুর
লতি। এটি খেলে অ্যাসিডিটি ও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে খুব কম।
আয়োডিনও বসতি গড়েছে কচুর লতিতে। কচুর লতি রক্তে
চিনির মাত্রাও বৃদ্ধি করে। ডায়াবেটিসের রোগীরা তাই নিঃসংকোচে খেতে পারেন এ সবজিটি।
কচুর লতিতে রয়েছে প্রচুর আয়রন। এটি রোগ প্রতিরোধ মতা বাড়ায়। রয়েছে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম, যা হাড় শক্ত
করে ও চুলের ভঙ্গুরতা রোধ করে। এ সবজিতে ডায়াটারি ফাইবার বা আঁশের পরিমাণ খুব
বেশি। এ আঁশ খাবার হজমে সাহায্য করে, দীর্ঘ বছরের
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, যে কোনো বড় অপারেশনের পর খাবার
হজমে উপকারী পথ্য হিসেবে কাজ করে। কচুর শাকও খুব উপকারী। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, বি, সি, ক্যালসিয়াম ও
লৌহ। মোটকথা, কচুর লতি ও কচুর পাতা সুস্থ-অসুস্থ সব
মানুষের শরীরের জন্যই খুব উপকারী। -
কচুর লতির গুণাগুণ-
১ আয়রন-কচুর
লতিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। গর্ভস্থ অবস্থা, খেলোয়াড়, বাড়ন্ত শিশু, কেমোথেরাপি পাচ্ছে- এমন রোগীদের
জন্য কচুর লতি ভীষণ উপকারী। এতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম। ক্যালসিয়াম
হাড় শক্ত করে ও চুলের ভঙ্গুরতা রোধ করে।
২ ফাইবার-এই
সবজিতে ডায়াটারি ফাইবার বা আঁশের পরিমাণ খুব বেশি। এই আঁশ খাবার হজমে সাহায্য করে, দীর্ঘ বছরের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, যেকোনো বড় অপারেশনের পর খাবার হজমে
উপকারী পথ্য হিসেবে কাজ করে এটি।
৩ ভিটামিন-ভিটামিন
‘সি’ও
রয়েছে কচুর লতিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে, যা
সংক্রামক রোগ থেকে আমাদের দূরে রাখে, শরীরের
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে করে দ্বিগুণ শক্তিশালী। ভিটামিন ‘সি’
চর্মরোগের বিরুদ্ধে কাজ করে।
৪ কোলেস্টেরল
বা চর্বি-কিছু পরিমাণ ভিটামিন ‘বি’
হাত, পা, মাথার উপরিভাগে গরম হয়ে যাওয়া, হাত-পায়ে ঝিঁ ঝিঁ ধরা বা অবশ ভাব-
এ সমস্যাগুলো দূর করে। মস্তিষ্কে সুষ্ঠুভাবে রক্ত চলাচলের জন্য ভিটামিন ‘বি’
ভীষণ জরুরি। এতে কোলেস্টেরল বা চর্বি নেয়। তাই ওজন কমানোর জন্য কচুর লতি খেতে বারণ
নেই।
৫ আয়োডিন-খাবার
হজমের পর বর্জ্য দেহ থেকে সঠিকভাবে বের হতে সাহায্য করে। তাই কচুর লতি খেলে
অ্যাসিডিটি ও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে খুব কম। আয়োডিনও বসতি
গড়েছে কচুর লতিতে। আয়োডিন দাঁত, হাড়
ও চুল মজবুত করে।
৬ ডায়াবেটিস-অনেকেই
কচুর লতি খান চিংড়ি মাছ দিয়ে। চিংড়ি মাছে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে কোলেস্টেরল। তাই
যাঁরা হৃদরোগী, ডায়াবেটিস
ও উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরলজনিত সমস্যায় আক্রান্ত বা উচ্চ রক্তচাপে (হাই ব্লাড
প্রেশারের) ভুগছেন তাঁরা চিংড়ি মাছ শুঁটকি মাছ বর্জন করুন।
ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল, হাই ব্লাডপ্রেশার নিয়ন্ত্রণে থাকলে
অল্প পরিমাণে চিংড়ি মাছ খেতে পারেন কচুর লতিতে। তবে মাসে এক দিন অবশ্য ছোট চিংড়ি
মাছ দিয়ে খেতে পারেন। বড় চিংড়িতে ফ্যাটের পরিমাণ বেশি, তাই পরিহার করা ভালো।
কচুর লতি রক্তে চিনির মাত্রা বাড়ায় না। তাই
ডায়াবেটিসের রোগীরা নিঃসংকোচে খেতে পারেন কচুর লতি।
কেন খাবেন
*প্রতি
দিনের খাদ্য তালিকায় কচুর ডাঁটা বা কচু রাখা যেতে পারে। গরমে শরীর থেকে পানি
বেরিয়ে যায়। কচুর ডাঁটায় প্রচুর পানি থাকে।
*এতে প্রচুর
পরিমাণে ফাইবার, ফোলেট, থায়োমিনও রয়েছে।
*কচু রক্তের
কোলেস্টরলের মাত্রা কমায়।
*কোলন
ক্যান্সার ও ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে।
*শিশুদের
কচুশাক বেশি করে তেল দিয়ে খাওয়ানো ভালো। এতে রাতকানা রোগের আশঙ্কা কমে।
*কচুতে
অক্সলেট রয়েছে। তাই রান্নার পরও কোনো কোনো ক্ষেত্রে গলা খানিকটা চুলকায়। তাই কচুর
তরকারি খাওয়ার সময় কিছুটা লেবুর রস মিশিয়ে নিন।
কেন খাবেন না
*অনেক
ক্ষেত্রে কচু খেলে শরীরে অ্যালার্জি এবং হজমে সমস্যা দেখা দেয়। এ ক্ষেত্রে যাদের এ
ধরনের সমস্যা রয়েছে তারা কচু খাবেন না।
লতি-চিংড়ি
উপকরণ: কচুর লতি (ছিলে কুটে নেওয়া) এক কেজি, মাঝারি চিংড়ি ১০/১২টি, হলুদের গুঁড়ো দেড় চা-চামচ, লাল মরিচের গুঁড়ো ২ চা-চামচ, লবণ সোয়া চা-চামচ, চিনি ২ চা-চামচ, টমেটো বাটা সিকি কাপ, পেঁয়াজ কুচি আধা কাপ, সয়াবিন তেল পৌনে এক কাপ, আদা বাটা ২ চা-চামচ, রসুন বাটা ২ চা-চামচ, চেরা কাঁচা মরিচ ৫টি, রসুন বাটা ২ চা-চামচ, রসুন ১টি (কুচি), লেবুর রস ১ টেবিল চামচ।
প্রণালি: চিংড়ি মাছগুলো আধা চা-চামচ হলুদ গুঁড়া ও সিকি চামচ লবণ দিয়ে
মেখে কড়াইয়ে আধা কাপ তেল গরম করে ভেজে উঠিয়ে রাখুন। একই তেলে লতিগুলো দিয়ে
নেড়ে মাঝারি আঁচে ঢেকে দিন। আধা ঘণ্টা পর ভাজা ভাজা হয়ে এলে তেল ছেঁকে লতিগুলো
উঠিয়ে রাখুন। উপকরণ: কচুর লতি (ছিলে কুটে নেওয়া) এক কেজি, মাঝারি চিংড়ি ১০/১২টি, হলুদের গুঁড়ো দেড় চা-চামচ, লাল মরিচের গুঁড়ো ২ চা-চামচ, লবণ সোয়া চা-চামচ, চিনি ২ চা-চামচ, টমেটো বাটা সিকি কাপ, পেঁয়াজ কুচি আধা কাপ, সয়াবিন তেল পৌনে এক কাপ, আদা বাটা ২ চা-চামচ, রসুন বাটা ২ চা-চামচ, চেরা কাঁচা মরিচ ৫টি, রসুন বাটা ২ চা-চামচ, রসুন ১টি (কুচি), লেবুর রস ১ টেবিল চামচ।
একই তেলে আরও সিকি কাপ তেল গরম করে পেঁয়াজ কুচি হালকা বাদামি করে ভেজে সব গুঁড়া ও বাটা মসলা দিয়ে অল্প অল্প করে পানি দিয়ে কষিয়ে নিন। এবার চিনি দিয়ে নেড়ে টমেটো বাটা দিয়ে আরও কিছুক্ষণ ভালো করে কষিয়ে নিন।
ভেজে রাখা লতি ও চিংড়ি মাছের সঙ্গে লবণ দিয়ে মাঝারি আঁচে নেড়ে ঢেকে দিন। একটু পর ঢাকনা খুলে সামান্য হাত ধোয়া পানি দিয়ে নেড়ে কাঁচা মরিচ ও লেবুর রস দিয়ে নেড়ে ঢেকে দিন। মাখা মাখা হয়ে লতি সেদ্ধ হলে কিছুক্ষণ দমে রাখুন। তেল ছাড়া শুরু করলে নামিয়ে ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন।
কচুর লতি ইলিশ
উপকরণ:
কচুর লতি
|
৫০০
গ্রাম
|
ইলিশ মাছ
|
৬
টুকরা
|
হলুদ গুঁড়া
|
আধা
চা চামচ
|
মরিচ গুঁড়া
|
আধা
চা চামচ
|
ধনে গুঁড়া
|
১
চা চামচ
|
পেঁয়াজ কুচি
|
আধা
কাপ
|
কাঁচামরিচ ফালি
|
৪টি
|
লবণ
|
স্বাদমতো
|
তেল
|
১
কাপের ৪ ভাগের ৩ ভাগ
|
প্রণালি:
১।
কচুর লতি কেটে ধুয়ে ভাপিয়ে নিন।
২। মাছ কেটে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। কড়াইয়ে তেল দিন। গরম হলে পেঁয়াজ কুচি দিন।
৩। পেঁয়াজ নরম হলে সব গুঁড়া মসলা পানি দিয়ে গুলে দিন। লবণ দিয়ে কষিয়ে মাছ দিন। মাছ ভালোভাবে কষিয়ে ১ কাপের ৪ ভাগের ১ ভাগ পানি দিয়ে ঢেকে দিন।
৪। পানি টেনে এলে কচুর লতি ও কাঁচামরিচ দিয়ে নেড়ে ঢেকে দিন।
৫। মাঝে একবার নাড়ুন। তেলের ওপর উঠে এলে নামিয়ে গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন।
২। মাছ কেটে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। কড়াইয়ে তেল দিন। গরম হলে পেঁয়াজ কুচি দিন।
৩। পেঁয়াজ নরম হলে সব গুঁড়া মসলা পানি দিয়ে গুলে দিন। লবণ দিয়ে কষিয়ে মাছ দিন। মাছ ভালোভাবে কষিয়ে ১ কাপের ৪ ভাগের ১ ভাগ পানি দিয়ে ঢেকে দিন।
৪। পানি টেনে এলে কচুর লতি ও কাঁচামরিচ দিয়ে নেড়ে ঢেকে দিন।
৫। মাঝে একবার নাড়ুন। তেলের ওপর উঠে এলে নামিয়ে গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন।
কচুর লতিতে ডালের মাখনি
উপকরণ: কচুর লতি ৫০০ গ্রাম, রসুনকুচি ৪ টেবিল-চামচ,
পেঁয়াজকুচি ২ টেবিল-চামচ, রসুনবাটা ১
চা-চামচ, তেল আধাকাপের কম, লেবুর খোসাসহ কুচি ১ টেবিল-চামচ, ডাল খেসারি বা মুগ ১ কাপ, কাঁচা মরিচ ৫-৬
টুকরা, হলুদগুঁড়া ১ চা-চামচ, মরিচগুঁড়া ১ চা-চামচ, লেবুর রস ১ টেবিল-চামচ,
লবণ পরিমাণমতো।
প্রণালি: কচু ভাপ দিয়ে পানি ফেলে দিতে হবে। ডাল ধুয়ে ১৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখতে হবে।
এবার ১ টেবিল-চামচ রসুনকুচি, ২ টেবিল-চামচ পেঁয়াজকুচি,
২-৩টি কাঁচামরিচ ও অল্প লবণ দিয়ে সেদ্ধ করতে
হবে। ডাল সেদ্ধ হবে কিন্তু ভেঙে যাবে না। এভাবে সেদ্ধ করে নামাতে হবে। অন্য পাত্রে
তেলে রসুনকুচি ও মেথির ফোড়ন দিয়ে সব বাটা ও গুঁড়া মসলা আধাকাপ পানি দিয়ে কষাতে
হবে। মসলা ভালোভাবে কষানো হলে ২ কাপ গরম পানি দিতে হবে। ফুটে উঠলে লতিগুলো বিছিয়ে
দিতে হবে। একটু পর ডাল সেদ্ধ কাঁচামরিচ দিয়ে দমে রান্না করতে হবে। মাখা মাখা হলে
নামানোর আগে লেবুর রস ও খোসার কুচি দিয়ে নেড়ে নামাতে হবে।
চিংড়ি শুটকি, বেগুন ও আলু চচ্চড়ি
উপকরণ:
চিংড়ি শুটকি – ৭০ গ্রাম
বেগুন – ৩০০ গ্রাম
বড় আলু – ২ টা (চিড় করে
কাটা)
পিঁয়াজ – ৫টি (কুচি করে
কাটা)
রসুন(বড়) – ২ টি (কুচি করে
কাটা)
হলুদ গুড়া – ১/৩ চা চামচ
কাঁচা মরিচ – ৮ টি (চিড় করা)
লবণ ও তেল পরিমাণ মত
পদ্ধতি:
প্রথমেই চিংড়ি শুটকি ফুটন্ত গরম পানিতে ভিজিয়ে পরিষ্কার করে নিন।
লবণ, তেল, মরিচ, হলুদ,
পিঁয়াজ কুচি, রসুন কুচি, কাঁচা মরিচ ও চিংড়ি শুটকি ভালো করে কষিয়ে নিন।
এবার তাতে আলু ও বেগুন যোগ করুন।
অল্প পানি দিয়ে ঢেকে রান্না করুন।
পানি কমে চচ্চড়ি হয়ে এলে নামিয়ে নিন।
কচুর লতি চচ্চড়ি
উপকরণ: লতি আধা কেজি, চিংড়ি মাছ ৮-১০টি মাঝারি,
পেঁয়াজকুচি ২ টেবিল চামচ, নারকেলবাটা ১
টেবিল চামচ, সরষেবাটা ১ টেবিল চামচ, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, হলুদগুঁড়া আধা চা-চামচ,
মরিচগুঁড়া আধা চা-চামচ, কাঁচা মরিচ ৫টি,
লবণ স্বাদমতো, তেল প্রয়োজনমতো।
প্রণালি: লতি পরিষ্কার করে কেটে ধুয়ে ওপরের সব উপকরণ দিয়ে মাখিয়ে ১
কাপ পানি দিয়ে কড়াইতে প্রথমে মাঝারি আঁচে পাঁচ মিনিট এবং মৃদু আঁচে ১০ মিনিট রাখতে
হবে। মাঝখানে লতি একবার উল্টে দিতে হবে। ইচ্ছা হলে পাতলা পাতলা করে আমড়া কেটে
দেওয়া যায় লতি চচ্চড়িতে।
কচুর লতির ঘণ্ট
উপকরণ
• কচুর লতি • জিরে, তেজপাতা, ফোড়নের জন্য • পেঁয়াজ কুচি • টোম্যাটো কুচি • কাঁচালঙ্কা • সাদা তেল: প্রয়োজন মতো
• সরষে বাটা: ১ বড়
টেবল-চামচ • নারকেল: ১টা (কোরানো) • নুন-চিনি: আন্দাজ মতো • ঘি: সামান্য
প্রণালী
• কচুর লতি ভাল করে
ধুয়ে, কুচি করে কেটে সেদ্ধ করে নিন।
• সেদ্ধ লতি থেকে ভাল
করে জল ঝরিয়ে চটকে মেখে রাখুন।
• তেল গরম করে জিরে,
তেজপাতা ফোড়ন দিন।
• পেঁয়াজ ও টোম্যাটো
কুচি হাল্কা করে ভেজে নিন।
• এ বার কাঁচালঙ্কা
দিতে হবে।
• সরষে বাটা ও ১/৪
নারকেল কোরা দিয়ে পুরো মিশ্রণটি ভাল করে কষতে হবে।
• এ বার চটকানো লতি
এই মিশ্রণে দিতে হবে।
• কিছু ক্ষণ
নাড়াচাড়া করে আন্দাজমতো নুন-চিনি মিশিয়ে নামিয়ে নিন।
• উপরে ঘি ও বাকি
নারকেল কোরা ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।
No comments:
Post a Comment